মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আসলে হিন্দু এবং ভারতে মাদ্রাসা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ভারতের বাইরে থেকে আসা মুসলমানরা আসামে আছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল রোববার দিল্লিতে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মুখপাত্রের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা এসব কথা বলেন।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মাদ্রাসা শব্দটিই সরিয়ে দেওয়া উচিত। কোরআন বাড়িতে পড়ানো হোক। স্কুলে ছাত্রকে বিজ্ঞান ও অঙ্ক শেখানো হোক। আমরা ক্ষমতায় এসেই এই সিদ্ধান্ত নিই যে সরকারের টাকায় একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না।’
পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার কারণে ছাত্রের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে—এমন একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মাদ্রাসায় যে ছাত্র যাচ্ছে, সে অনেক সময় ভালো ছাত্রে পরিণত হচ্ছে। এর কারণ, আদতে সে হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। এমন একটা সময় ছিল, যখন সব মুসলমানই হিন্দু ছিল।’
বিশ্বশর্মা বলেন, মুসলমানদের এখনই ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দুত্বে আনা সম্ভব নয়। একটা নির্দিষ্ট আবহাওয়া ও শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সেটা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। তবে মুসলমানদের এখনই ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দুত্বে আনা সম্ভব নয়—বলেন বিশ্বশর্মা।
একটা নির্দিষ্ট আবহাওয়া ও শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সেটা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। সেই শিক্ষাব্যবস্থা বা আবহাওয়া কী—সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন মানুষকে যে মন্দিরে যেতে হবে বা মূর্তিপূজা করতে হবে, এমনটাও নয়। একজন মানুষকে ভারতের স্বার্থ মাথায় রাখলেই চলবে।’
আরএসএসের দুটি মুখপাত্র ‘পাঞ্চজন্য’ ও ‘অর্গানাইজার’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিশ্বশর্মা। অনুষ্ঠানের পর ঘরোয়া আলোচনায় বিশ্বশর্মা তাঁর বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখান। বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যাতে যেকোনো ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে তার নিজের বিষয় ও জীবন বেছে নিতে পারে।’ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আসামে এখনো বাইরে থেকে অনেক মুসলমান প্রবেশ করছেন, এমন ইঙ্গিতও দেন বিশ্বশর্মা। বলেন, ‘আসামের ৩৬ শতাংশ মুসলমানকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। তাঁরা হলেন, মূল নিবাসী মুসলমান, যাঁরা আসামের সংস্কৃতি ও ভাষাকে নিজের করে নিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া দেশীয় মুসলমান সম্প্রদায় ও ভারতের বাইরে থেকে আসা মুসলমান। এদের সংস্কৃতি আলাদা। এরা নিজেদের মিয়া বলে।’ এদের ‘মিয়া মুসলমান’ বলে ডাকা উচিত বলে মত দেন তিনি।
আসামে সাধারণভাবে বাঙালি মুসলমানদেরই মিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়। এ নিয়ে রাজ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। যাঁদের মিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়, তাঁদের ‘সাম্প্রদায়িক’ বলেও অতীতে মন্তব্য করেছেন বিশ্বশর্মা।
দিল্লিতে দেওয়া ওই বক্তব্যে কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, ‘দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ও একই পরিবার দেশ শাসন করে যাবে। এই দুই বিচারধারার মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন রাহুল গান্ধী। ফলে ভারতের সংস্কৃতিকে তিনি সম্মান করতে শেখেননি।’
হিমন্ত বিশ্বশর্মার এসব বক্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আরএসএসের এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে আরএসএসের কোনো সম্পর্ক নেই, এগুলো বিশ্বশর্মার ব্যক্তিগত মন্তব্য।’ ‘একটা দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে নানা ধরনের লোক এসে জড়ো হয় ও তাদের মতামত জানায়। মতামত সঠিক, না ভুল, তা ইতিহাস বিচার করবে’—বলেন আরএসএসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।