আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আবেদনের আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ক এর অধীন নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৯ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এ উল্লেখিত শর্তাবলী পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলসমূহকে বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্দেশিকা মোতাবেক পূরণ করতে হবে। এরপর ওই দলের স্বীয় লেটারহেড প্যাডে দরখাস্ত করতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং ওই অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি, দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ, দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া নিবন্ধ ফি বাবদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি জমা দিতে হবে।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল জমা দিতে হবে।
অথবা, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে ওই দলের নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত ভোটের শতকরা পাঁচভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্তত এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা থানায় অন্তত ২০০ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল দাখিল করতে হবে।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ওই দলের অনুকূলে কমিশন ফরম-৩ এ একটি নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করবে। এরপর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে।
এর আগে, ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর দল নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬টি রাজনৈতিক দল। কেএম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট- এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই- বাছাইয়ের পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে গত ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।