রাজধানী ঢাকার শ্যামপুর ও মিরপুরে পৃথক দুইটি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দুইজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ে ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দা হাফছা ঝুমা শ্যামপুরের ও ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম মিরপুরের হত্যা মামলায় পৃথক রায় ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে শ্যামপুরের শেখ ইসলাম পাভেল হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম মো. তুহিন। এ মামলায় তুহিনের ছোট ভাই এরফান ও দুই ফুফাতো ভাই মাসুম এবং রাব্বিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর দুই ফুফাতো ভাইয়ের মধ্যে আদালত রায়ে মাসুমের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন।
অন্যদিকে মিরপুরে স্টেশনারি দোকানি কাজী জহুরুল ইসলাম বাবু হত্যায় মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম এমদাদুল হক ওরফে গন্ডার। এই মামলায় এমদাদুলের দুই ভাই শহিদুল্লাহ ও মনির এবং তাদের সহযোগী আজাদুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে শহিদুল্লাহ পলাতক রয়েছেন।
- আরও পড়ুন >> ভূমধ্যসাগরে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
শ্যামপুরের পাভেল হত্যা মামলা থেকে জানা যায়, মামলার ভিকটিম এবং আসামিরা শ্যামপুরের জুরাইন এলাকায় বাস করতেন। তুহিন ভিকটিমের বোনকে প্রায় বিরক্ত করতেন। এ নিয়ে পাভেল ও তুহিনের মধ্যে বিরোধ ছিল। ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর রাতে এলাকায় ধূমপান করছিলেন। পাভেল তাকে ধূমপান করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পাভেলকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান তুহিন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জুরাইন নতুন রাস্তা খাদ্য ভবনের পাশে পাভেল তার বন্ধদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এসময় আসামিরা পাভেলের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। পাভেলকে তার বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাভেলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই পাভেলের বাবা মনির হোসেন শ্যামপুর থানায় মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন পিবিআইর সাব-ইন্সপেক্টর মাসুদ খান। রায় ঘোষণার আগে তুহিনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মাসুম পলাতক রয়েছেন। অপর দুইআসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণা শেষে তিন আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে মিরপুরের বাবু হত্যা মামলা সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে স্টেশনারি দোকারি কাজী জহুরুল ইসলাম বাবুকে মিরপুরের মধ্য মনিপুর এলাকার বাসা থেকে ডেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন আসামিরা। এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের ভাই কাজী তাজুল ইসলাম মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৪ সালের ২৬ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মিরপুর মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর ইমানুর হোসেন। এরপর আদালত চার আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলার বিচার চলাকালে আদালত চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে শহিদুল্লাহ পলাতক রয়েছেন। অপর তিন আসামি কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পরে আবার সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন এ মামলা পরিচালনা করেন।