নতুন অর্থবছরেও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা একই থাকতে পারে। প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এমনই পরিকল্পনা করেছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় থাকলে আয়কর দিতে হয় না।
অর্থনীতিবিদদের অনেকেই করোনার প্রভাব এবং উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির কারণে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের বাজেট প্রস্তাবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, মূল্যস্ম্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে গত এপ্রিলে মূল্যস্ম্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনা-পরবর্তী বাড়তি চাহিদা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্য ও সেবামূল্য বেড়ে যাচ্ছে। চলতি মে মাসে দেশে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য, নির্মাণ উপকরণ, যাতায়াত খরচসহ জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু খরচের তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় এবং মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সরকার করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। ওই বছর ব্যক্তিশ্রেণির সর্বনিম্ন করহার ১০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে। বর্তমানে মোট রাজস্বের প্রায় ৩৫ শতাংশ আসছে আয়কর থেকে। দেশে প্রায় ২৫ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালে বিদ্যমান করদাতাদের একটি বড় অংশ করের বাইরে চলে যাবেন। এতে করভিত্তি সংকুচিত হবে। এনবিআর করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়াতে চাচ্ছে। এ জন্য নতুন করদাতাকে করজালে অন্তর্ভুক্ত করতে এ সীমা পরিবর্তন না করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক দেশে করমুক্ত কোনো আয়সীমা নেই। কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের সমান। আবার কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের চেয়ে কম। আবার কোনো কোনো উন্নত দেশে করমুক্ত আয়সীমা মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশেরও কম। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা মাথাপিছু আয়ের চেয়ে বেশি। উল্লেখ্য, বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় বছরে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।
বর্তমানে পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ও নারী করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বর্তমান সরকার প্রথম দায়িত্ব গ্রহণের সময় ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।