শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা : সাজাপ্রাপ্ত ৪ আসামির জামিন আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন। তারা হলেন- সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, মো. ইয়াছিন আলী, তোফাজ্জল হোসেন ও মাহফুজুর রহমান। আসামিরা সবাই চার বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

মঙ্গলবার (৩১ মে) সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহেই তারা জামিন আবেদন করেছেন। আজ তাদের জামিন আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন সাতক্ষীরা আদালত।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান ও রিপনকে ১০ বছর করে, আব্দুল কাদের বাচ্চুকে নয় বছর, আব্দুর রাজ্জাককে ছয় বছর, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রাকিব মোল্লা, আক্তারুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, হাসান আলী, ইয়াছিন আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রব, রিংকু ও আব্দুস সামাদকে চার বছর ছয় মাস করে এবং আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, আব্দুল খালেদ মঞ্জুর রোমেল, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, জহুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, মো. আলাউদ্দিন, আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহীদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফ্ফার গাজী ও মাহাফুজুর রহমান সাবুকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০২ সালে কলারোয়ার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই বছরের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন। কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহর পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

তারা গুলিবর্ষণ করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় বিরোধীদলীয় নেতা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়িবহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন।

পরে কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। থানা মামলাটি রেকর্ড না করায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে মামলাটি করেন। এ মামলা খারিজ হয়ে যাবার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ সময় তদন্ত করে পুলিশ তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।

মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। এরপর ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য শেষ করার জন্য সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর মামলাটির বিচার কাজ নতুন করে শুরু হয়। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।

শেয়ার করুন