থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়াতে হাত মেলাচ্ছে। এ বিষয়ে একটি চুক্তির জন্য দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। তবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ দুটির এই যোগসাজশ সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্সের।
গত শুক্রবার (২৭ মে) থাই সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদকের (থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম) মধ্যে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। জোটবদ্ধ হয়ে চালের দাম ও বিশ্বের সঙ্গে দেশ দুটির দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য।
শুক্রবার ব্যাংককে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের উচ্চপদস্থ কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে এক বৈঠকে এ নিয়ে কথা হয়েছে। অবশ্য ভিয়েতনাম সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাম্মানিক সভাপতি চোকিয়াত ওফাসওংসে বলেছেন, এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি থাই সরকার। আর এই পরিকল্পনাও খুব একটা যুক্তিযুক্ত নয়।
তিনি বলেন, থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম চালের বৃহত্তম রপ্তানিকারক নয়। দুই দেশ একত্রিত হওয়ার পরেও (বৈশ্বিক রপ্তানিতে) তাদের অংশ ভারতের চেয়ে কম। ফলে (চালের দাম বাড়ালে) ক্রেতারা অন্যদের দিকে ঝুঁকবে। তাছাড়া, দাম বাড়ার অপেক্ষায় চাল বেশি দিন সংরক্ষণও করা যায় না।
থাই এ ব্যবসায়ী নেতার কথায়, রাজনীতিবিদরা চালের বাজার বোঝেন না এবং এ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
প্রায় একই কথা বলেছেন ভিয়েতনামের ফুড অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নগুয়েন নগোক নামও। তার মতে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে চালের দাম বাড়ানো হবে একেবারেই অযৌক্তিক।
নগুয়েন জানিয়েছেন, আগামী জুনে থাই খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। তবে তাদের লক্ষ্য, চালের উৎপাদন বাড়ানো, মূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ভিয়েতনামের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
থাইল্যান্ডের কৃষি ও সমবায় মন্ত্রীর উপদেষ্টা অ্যালংকর্ন পোনলাবুট বলেছেন, চালের দাম বাড়ালে দুই দেশই উপকৃত হবে, এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত ভিয়েতনাম। তবে এটি ফলপ্রসূ হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরও আলোচনা দরকার।
জোট ‘অসম্ভব’
বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক ভারত। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রচুর সরবরাহ, আমদানিকারকদের চাহিদা কমে যাওয়া এবং রুপির দরপতনের জেরে গত সপ্তাহে দেশটিতে চালের রপ্তানিমূল্য নেমে গেছে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
সোমবার (৩০ মে) ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের পাঁচ শতাংশ ভাঙা চালের দাম ভিয়েতনামের চেয়ে প্রতি টনে অন্তত ৫০ মার্কিন ডলার (৪ হাজার ৪৫১ টাকা প্রায়) এবং থাইল্যান্ডের চেয়ে ১০০ মার্কিন ডলার (৮ হাজার ৯০৩ টাকা প্রায়) কম। বিয়ার ও পশুখাদ্যে ব্যবহারের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামই ভারত থেকে চাল আমদানি করেছে।
মুম্বাই-ভিত্তিক একটি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ডিলার বলেন, ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া কাজ করবে না। ভারতীয় চাল এখনই অনেক সস্তা… অন্যরা যদি দাম বাড়ায়, তাহলে ক্রেতারা ভারতের দিকে সরে যাওয়াই স্বাভাবিক। ফলে (চালের দাম বাড়ালে) থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম বাজারের হিস্যা হারাবে এবং তা ফিরে পেতে তাদের আবারও দাম কমাতে হবে।
ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, এই ইস্যুতে ভিন্ন অনেক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা এবং (থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম) কেউই শীর্ষ রপ্তানিকারক না হওয়ায় জোট গঠন অসম্ভব। যদি ভারত রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, তাহলে থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম জোট না গড়লেও চালের দাম বেড়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বিশ্বের মোটা চাল উৎপাদনে প্রায় ১০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক রপ্তানিতে প্রায় ২৬ শতাংশ অবদান রাখে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ দুটি যদি সত্যি সত্যি জোট গড়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হবে সম্ভবত ফিলিপাইনের। তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল আমদানিকারক এবং থাই ও ভিয়েতনামি চালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
গত বছর ফিলিপাইনে রেকর্ড দুই কোটি টন ধান উৎপাদন হলেও তা দেশটির ১১ কোটি মানুষকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে প্রচুর চাল আমদানি করতে হয়েছিল তাদের।