পদ্মা সেতু ক্ষমতাসীন দলের লুট, আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘অন্য দেশ থেকে চড়া সুদে এই পদ্মা সেতু বানিয়ে কৃতিত্ব নিচ্ছেন? ওটা তো লুটের প্রতীক, আত্মসাতের প্রতীক, দুর্নীতির প্রতীক। আজকে যে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে তার মাথায়ও ৯৮ হাজার টাকা ঋণের বোঝা আছে। তাকেও পরিশোধ করতে হবে। চীন থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে বলছেন নিজস্ব অর্থায়নে। এটির মাধ্যমে আপনি গোটা জাতিকে ঋণগ্রস্ত করেছেন আরেকটি জাতির কাছে।’
আজ বুধবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা কি আপনার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের হয়েছে? আপনি তো টাকা নিয়েছেন চড়া সুদে চীনের কাছ থেকে। চীনের কাছ থেকে লোন নিয়ে আপনি পদ্মা সেতু বানিয়েছেন। এই পদ্মা সেতুর মধ্যে একটি প্রতীকী জিনিস ভেসে ওঠে, সেটি হলো আওয়ামী লীগের দুর্নীতি। কারণ, এই সেতু অত্যন্ত অল্প সুদে বিশ্বব্যাংক বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা নিজের প্যাডে টাকা চেয়েছে। বলেছে, এই টাকা অমুক কোম্পানিকে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা যদি জড়িত থাকে তাহলে কি এটা প্রমাণিত হয় না যে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির সাথে জড়িত?’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আপনি তো বৈধ সরকার নন। তাই আপনাকে তো জনগণের কাছে জবাব দিতে হয় না। আপনি এবং আপনার মন্ত্রীরা যেভাবে কথা বলেন এটাতেই প্রমাণ হয় যে, আপনাদের ভোটের দরকার নাই। রাতের ভোট, ভোটারবিহীন নির্বাচনের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে আপনাদের শাসনামলে। আওয়ামী শাসন মানেই রাতের বেলায় ভোট, নিশিরাতে ভোট।’
নিজস্ব অর্থায়নে কোনো কিছু করার দৃষ্টান্ত বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর নেই দাবি করে রিজভী বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা ব্যারেজ করার দৃষ্টান্ত আছে কেবল জিয়াউর রহমানের।আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) দৃষ্টান্ত দুর্নীতি, লুটপাট আর হরিলুট করার। আপনি চীনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বাহাদুরি দেখাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি সরকার তো বৈধ নয়, আওয়ামী লীগের নেতারাই তো বলেছিলেন- ডিল করে ক্ষমতায় এসেছি। ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল তখন তাদের দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জলিল সাহেব বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন- আওয়ামী লীগের কেবিনেটে যাদেরকে দেখছেন তাদের অনেকেই ডিজিএফআইয়ের লোক।’
শেখ পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে এদের কোনো অবদান নাই। না শেখ হাসিনা, না তার স্বামীর। মরহুম শেখ মুজিবুরের ছেলে কামাল গিয়েছিলেন, ট্রেনিং ও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, যদি তার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। কোনো দিক থেকেই এই পরিবারের মুক্তিযুদ্ধে কোনো অবদান নেই। আর রণাঙ্গনের সব মুক্তিযোদ্ধারা বিএনপি করেন। যেমন- ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমসহ অনেকেই। এই কারণেই আওয়ামী লীগের যত ঈর্ষা। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে শেখ পরিবারের কোনো ভূমিকা নেই।’
সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাবেক নেতা মোর্তাজুল করিম বাদরু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, কৃষকদলের সাবেক নেতা শাহজান মিয়া সম্রাট প্রমুখ বক্তব্য দেন।