চোটজর্জর ভঙ্গুর এই বাংলাদেশ দল নিয়ে স্বাগতিক ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে হার এড়াতে পারবে, এমন ভাবনা হয়তো দেশের ফুটবলের অনেক পাড় সমর্থকেরও ছিল না! কিন্তু আজ ইন্দোনেশিয়ার বান্দুংয়ে শি জালাক হারুপুত স্টেডিয়ামে সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। র্যাঙ্কিংয়ে ২৯ ধাপ এগিয়ে ইন্দোনেশিয়ার (১৫৯) সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ (১৮৮)।
ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে এই ড্রটি এসেছে ৩৭ বছর পর। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে কায়েদে আজম ট্রফিতে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ১–১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আজকের আগে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া মুখোমুখি হয়েছিল ৬ বার। ইন্দোনেশিয়ার ৪ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন এক জয় ও এক ড্র।
আজকের আগে ২০০৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছিল বাংলাদেশ। মারদেকা কাপের সে ম্যাচে ২–১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ১৪ বছর পর ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৯ ধাপ এগিয়ে থাকা দেশটির বিপক্ষে গোলশূন্য করতে পারাটা ভালো ফলাফলই বলতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ দলে চোটের চোটপাটও মাথায় রাখলে মনে হতে পারে, জয়ের সমান এক ড্র-ই পেয়েছে বাংলাদেশ।
আসলে বাংলাদেশ আজ হার এড়িয়েছে মূলত গোলকিপার আনিসুর রহমানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। বেশ কয়েকবার দারুণভাবে গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। ম্যাচের আগে ‘লো ডিফেন্স, লো ডিফেন্স’ কথাটাই বারবার বলেছিলেন বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দলকে ৪–২–৩–১ ফরমেশনে খেলিয়ে নিজেদের বক্সের সামনে জমাট বেঁধে রাখার সে লক্ষ্যে স্প্যানিশ কোচ সফলই বলা যায়।
রক্ষণভাগ সামলানোর কাজটি দাঁতে দাঁত চেপে করে গিয়েছেন বিশ্বনাথ ঘোষ, টুটুল হোসেন, রিমন হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত। রক্ষণভাগ জমাট রাখার কারণে ওভারল্যাপও করতে দেখা যায়নি দুই ফুলব্যাক রিমন ও ইয়াছিনকে।
রক্ষণভাগকে বাড়তি ছায়া দেওয়ার জন্য জামাল ভূঁইয়া ও আতিকুর রহমানকে মাঝমাঠে ‘ডাবল পিভট’ হিসেবে খেলানো হয়েছে। নিচে নেমে এসে রক্ষণে সহায়তা করেছেন দুই উইঙ্গার রাকিব হোসেন ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। এতে ‘মিডল করিডর’ ছিল সুরক্ষিত। সোজা কথা দশে মিলে গোল ঠেকানোর কাজটা করে যাও। এতে বড় কোন ভুল না করাতে মাঠ ছাড়া গেল ড্র নিয়ে।
১১ মিনিটেই প্রথম সুযোগ পায় ইন্দোনেশিয়া। আসনাওয়ি ম্যাংকুয়ালামের লম্বা থ্রো-ইন থেকে ফাসরুদ্দিনের হেড ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন আনিসুর। দুই মিনিট পর বক্সের একটু ভেতর থেকে সাদ্দিল রামদানির বাঁ পায়ের জোরালো শট ঠেকান বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে।
এর পরে তো ‘ওয়ান অন ওয়ান’ পরিস্থিতিতে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে দলকে রক্ষা করেছেন আনিসুর। রক্ষণচেরা পাস থেকে স্টিফেনো জানজি বক্সে ঢুকে শট নিলে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে বাধা হয়ে দাঁড়ান। দ্বিতীয়ার্ধেও ইন্দোনেশিয়ার সামনে বাধা আনিসুর। ৬৫ মিনিটে শারজিলের ফ্রি–কিক থেকে স্টেফানো ঝানজির হেড ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন তিনি।
অভিষিক্ত সাজ্জাদ হোসেনকে নাম্বার নাইন হিসেবে সামনে রেখে বাংলাদেশের লক্ষ্যই ছিল প্রতি আক্রমণে ওঠা। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের পেছনে বল ফেলে দ্রুত গতির সাজ্জাদকে দিয়ে যদি কাঁপুনি ধরানো যায় আর কি! এতে আক্রমণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে ইন্দোনেশিয়ার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে খেলাটা তৈরি করতে দেননি সাজ্জাদ। বাংলাদেশের সুযোগ বলতে একটি। তবে ২৫ মিনিটে রাকিবের শটটি অনায়াসে গ্রিপে নিয়েছেন ইন্দোনেশিয়া গোলকিপার।
নতুন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে এ নিয়ে সর্বশেষ দুই ম্যাচেই গোলশূন্য ড্র করল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে দুই ড্র, এক হার।