কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাইতে উঠে ভারতের জনপ্রিয় গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথের (কেকে) মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। একজন সুস্থ মানুষ গান গাইতে উঠে হঠাৎ কেন মারা গেলেন, এ নিয়ে জোর প্রশ্ন উঠেছে। যারা ওই কনসার্টে গিয়েছিলেন, তাদের মতে গায়কের মৃত্যুর দায় আয়োজকদের। এরই মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিহত সঙ্গীতশিল্পীর উদ্দেশে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এক চিকিৎসকও। দাবি উঠছে, কেকের মৃত্যু হয়েছে আয়োজকদের অবহেলাজনিত কারণে। আবার অনেকের প্রশ্ন, তাকে কি সুকৌশলে হত্যা করা হয়েছে? খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
কলকাতার যে মঞ্চে এই কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল, সেটির ভেন্যু ছিল ইনডোর। ফলে এসি থাকায় সেখানে ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তবে এসি কি চালানো হয়েছিল? প্রশ্ন এখানেই। এই কনসার্টে যারা গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবার কথার সারমর্ম একটাই, ধারণক্ষমতার অন্তত তিনগুণ ভিড় হয়েছিল সেদিন। নির্ধারিত আসন ছিল সব মিলিয়ে দেড় হাজার। কিন্তু পাঁচিল টপকে, অনেক জায়গায় গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার মানুষ। কারো কারো মতে, দেড় হাজারের জায়গায় সেখানে উপস্থিত ছিল অন্তত সাত হাজার মানুষ।
অন্যদিকে এসিও চলছিল না ঠিকমতো। কনসার্টে প্রকাশিত একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, গান গাইতে গাইতে কেকে বারবার ঘাম মুছছেন। এরই মধ্যে অপ্রত্যাশিত ভিড় কমাতে সেখানে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার স্প্রে করা হয়। সেই ধোঁয়াও ভালোভাবে বের হতে পারেনি। সব মিলিয়ে মারাত্মক গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কেকে। কিছুক্ষণ পরপর গ্রিনরুমে এসে পানি খাচ্ছিলেন তিনি।
শোনা যাচ্ছে, ভেন্যুতে পৌঁছে অস্বাভাবিক ভিড় দেখে গাড়ি থেকে নামতেও দ্বিধা করছিলেন কেকে। অনেকক্ষণ বসে ছিলেন গাড়িতে। পরে অনেকে মিলে ঘিরে ধরে তাকে সরাসরি গ্রিনরুমে নিয়ে আসা হয়।
কেকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে কলকাতার এক চিকিৎসক লিখেছেন, যতটা দুঃখ, ততটাই লজ্জা। বেসামাল ভিড়। এসি বেহাল-ভীষণ গরম। মুখের উপর ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার স্প্রে করা। দু’ঘণ্টার উপর সময় নষ্ট করে তারপর শেষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। আমাদের ক্ষমা করো।
গায়ককে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সময় নেয়া হয়েছিল। মূলত, মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে সেখান থেকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়ির মধ্যেই হাত-পায়ে খিঁচুনি শুরু হয় গায়কের। হোটেলে পৌঁছে সোফায় বসতে গিয়ে নিচে পড়ে যান তিনি। তখন মাথাতেও আঘাত পান তীব্র, সেখানে ক্ষতও সৃষ্টি হয়। তারপর শেষ দিকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন কেকে’কে।
প্রশ্ন উঠছে, গাড়ির মধ্যেই যদি খিঁচুনি শুরু হয়ে থাকে, তাহলে সেই মুহূর্তে গাড়ি ঘুরিয়ে কেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো না। এভাবে কেন প্রায় ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট করা হলো? এর দায় আয়োজকদের নিতে হবে বলেই দাবি ভক্তদের।