সরকার দেশের ৬৪ জেলায় মোট ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের সব উপজেলায় দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান এবং পরবর্তী শিক্ষায় উৎসাহিত করা হবে। এসব মাদ্রাসায় ২ হাজার ২০ জন শিক্ষক ও ১ হাজার ১০ জন সহায়ক কর্মীসহ মোট ৩ হাজার ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে। এ লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত মোট ১০১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখার স্বার্থে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৯ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ও দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ানো, আরবি ভাষাশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতার মানোন্নয়ন এবং সাধারণ শিক্ষিতদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিশেষ করে সরকার স্বীকৃত সনদধারী আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেমদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) আরএডিপিতে বরাদ্দবিহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সম্পূর্ণ নিজস্ব (জিওবি) অর্থায়নে একনেকে অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩ হাজার ৩০ জনকে সম্মানী (এরমধ্যে ২০২০ জন শিক্ষকের মাসিক সম্মানী ও ১০১০ জন সহায়ক কর্মীর সম্মানী) দেওয়া হবে। কমিটির সভা ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হবে। ৪ হাজার ৫০ জন আলেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৩৮ হাজার ৩৮০টি শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ, ৭ হাজার ৪০৩টি আসবাবপত্র, ৩ হাজার ৪৩টি অফিস সরঞ্জাম ও ৮টি কম্পিউটার কেনা হবে। এর বাইরেও ১ হাজার ১১টি ইন্টারনেট বা ফ্যাক্স, ৩ হাজার ৩৪টি বইপত্র বা সাময়িকী, ৪ হাজার ৪০টি প্রচার বা বিজ্ঞাপন, ৫৩ হাজার ৫৯২টি মুদ্রণ বা বাঁধাই এবং ২টি যানবাহন চুক্তিভিত্তিক ব্যবহার করা হবে।
সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের কৌশলসমূহের মধ্যে ঝড়ে পড়া হ্রাস, অনুপস্থিতির হার কমানো, শিক্ষার ফলাফলের গুণগত মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে দেশের সব উপজেলায় দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান এবং পরবর্তী শিক্ষায় উৎসাহিত করা হবে বিধায় প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রকল্পটি অনুমোদনের লক্ষ্যে একনেকের সভায় উপস্থাপনের ফাইলে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ও দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ানো, আরবি ভাষাশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বা মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, সাধারণ শিক্ষিতদের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত বিশেষত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত সনদধারী আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ আলেমদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতেও প্রকল্পটি অবদান রাখবে।
তাই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে দেশে সাক্ষরতার হার বাড়বে। আরবি ভাষাশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি বা মানবসম্পদ তৈরি হবে। শিক্ষিত আলেমদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।