হঠাৎ বেকারি ধর্মঘট, বিপাকে সাধারণ মানুষ

মত ও পথ ডেস্ক

বেকারিতে প্রবাসীর কেনাকাটা
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে বেকারি মালিকরা হঠাৎ করে ধর্মঘটে যাওয়ার পর সারাদেশে রুটি, বিস্কুটের মতো খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একদিনের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অনেক এলাকায় দুই বা তার চেয়ে বেশি দিন ধর্মঘট পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।

রাজধানী ঢাকার মিরপুরে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করে এমন একটি দোকানের মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেল, গতকাল তাদের সরবরাহকারী বেকারি থেকে জানানো হয়েছে তারা সাতদিন কোন বেকারি পণ্য সরবরাহ করবে না।

universel cardiac hospital

তিনি বলছেন, আজকে সরবরাহ না হলে কাল থেকেই খুচরা দোকানে টান পড়তে পারে। বিশেষ করে পাউরুটি বিক্রিতে, কারণ এটার ডেট কম থাকে। দোকানে এখনই কোন কিছু নাই এমন না। গতকাল ডেলিভারি দিয়ে গেছে কিন্তু সাতদিন না দিলে মুশকিল হয়ে যাবে। বিস্কুটে এখনই সমস্যা হবে না, কিন্তু পাউরুটির যেহেতু দুই তিন দিন ডেট থাকে, কাস্টমার পুরনো পাউরুটি নিতে চায় না।

মঙ্গলবার (৩১ মে) নতুন সরবরাহ না থাকায় দোকানে যে পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে তা আগের দিনের বা তারও আগে তৈরি।

ঢাকার মহাখালীর আমতলী এলাকার একটি দোকানের মালিক বলছেন তাদেরকে গতকাল জানানো হয়েছে শুধু আজ কোন সরবরাহ হবে না। বেকারি মালিকদের ধর্মঘট সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখিনি। ওনারা জানিয়েছেন যে তারা পণ্যের দাম বাড়াতে চান।

যে কারণে ধর্মঘট

সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে সাড়ে আট হাজারের মতো বেকারি রয়েছে। কী কারণে হঠাৎ তারা ধর্মঘট শুরু করেছেন জানতে চাইলে মালিকদের সমিতির সেক্রেটারি জসীম উদ্দিন বলেন, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন আর পারছেন না, তাদেরকেও এখন পণ্যের দাম বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, তেলের দাম যখন লিটারে ৬০ টাকা ছিল তখন আমরা যে দামে মাল বিক্রি করেছি, এখন লিটার ২০০ টাকার মতো, এখনও একই দামে বিক্রি করছি।

বেকারি মালিকরা বলছেন, তাদের ব্যবহৃত সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বেকারিতে যেসব কাঁচামাল লাগে তেল, ডালডা ছাড়াও যেমন ময়দা, চিনি সবকিছুর দাম বাড়তি। আমরা আর পেরে উঠছি না। কাছাকাছি সময়ে অনেক বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে।

বেকারি পণ্যের মূল্য কিভাবে নির্ধারিত হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকরা বসে দাম সমন্বয় করেন। সেটি না করে ধর্মঘট কেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আমাদের পরিস্থিতি জানাতে চাই।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ময়দার জন্য যে গম দরকার হয় ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করার কারণে তার সরবরাহ কমে গেছে।

মিল মালিকরা তাদের জানিয়েছেন, এক বস্তা গম আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই তারাও ময়দার দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ক্রেতারা যা বলছেন

বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলার পর তারা জানিয়েছেন, বেকারি ধর্মঘটের কারণে তারা দোকানে গিয়ে পাউরুটি পাননি।

মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা সুরভী আক্তার তার দুই ছেলেকে প্রায়ই স্কুলের টিফিনে পাউরুটি দিয়ে স্যান্ডুইচ বা অন্য কিছু তৈরি করে দেন। তিনি বলছেন, বিকেলের দিকে গেলাম পাড়ার দোকানে। গিয়ে দেখি ফ্রেশ পাউরুটি নেই। বলল কয়েকদিন হয়ত পাউরুটি নাও পাওয়া যেতে পারে। আমি বাধ্য হয়ে দুইদিনের পুরনো পাউরুটি কিনলাম।

গুলশানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তানজিয়া ইসলাম বলছেন, আমি কর্মজীবী নারী। সকাল বেলায় নাস্তায় রুটি বা পরোটা বানানো আমার জন্য সমস্যা। সকালে এত সময় থাকে না। পাউরুটি দিয়ে তাড়াতাড়ি কিছু একটা বানানো যায়। সেজন্য আমি নিয়মিত কিনি। এটা না পাওয়া গেলে বাসায় সকালের নাস্তায় আমার সমস্যা হয়ে যাবে। ফ্রোজেন পরাটা, রুটি পাওয়া যায় কিন্তু সেটা খাওয়ার জন্য আবার কোনা ধরনের ভাজি বা ডাল করতে হয়। সেটার দামও অনেক বেশি। পাউরুটি একজনের জন্য দু-তিন পিস হলে বড় এক প্যাকেটে আমার তিনজনের ফ্যামিলিতে দুই দিন চলে।

সূত্র: বিবিসি।

শেয়ার করুন