টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর বৃহস্পতিবার (২ জুন) লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় ঊর্ধ্বমুখী দেখা দিয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনেও ভালো গতি দেখা যাচ্ছে।
প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্টে পড়ে গেছে। আর লেনদেনে হয়েছে ১৫০ কোটি টাকার বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। একইসঙ্গে বড় ঊত্থান হয়েছে মূল্যসূচকের।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।
লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫২ পয়েন্ট বেড়ে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ১৪ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়েছে।
এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬টির। আর ৪৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭১ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১০৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।
এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৫৫ পয়েন্ট কমে গেলে গত ২২ মে মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাসকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিক নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়ায় ২৩ মে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক একদিনেই ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সূচকের এমন উত্থানের পর পরই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড বাদে অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাট অফ ডেটে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। আগে যেটা ছিল ১ কোটি টাকা।
একইভাবে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কমিশন সভা করে এ সিদ্ধন্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।
তারল্য বাড়াতে বিএসইসি এমন পদক্ষেপ নিলেও ২৪ ও ২৫ শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এমনকি ডিএসইতে লেনদেন কমে ২৫ মে ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন এনে একদিনে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ দাম কমার নিয়ম বেঁধে দেয় বিএসইসি। এর পর থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে শেয়ারবাজার।