ছাত্রলীগকে মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সতর্কতার সঙ্গে চলার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, অনেকে রাজনীতির মাঠে এখন লাশ চায়। তাদের সেই স্বার্থ যেন হাসিল না হয়।
গতকাল বুধবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এমন নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কেউ আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে তা গঠনমূলকভাবে প্রতিহত করব। রাজনীতিকে আসলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। কেউ সহিংসতা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাই ব্যবস্থা নেবে।
পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকদের দুঃশাসন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দুঃখজনক ছিল। কারণ, ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল সেই মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে, যারা উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করতেন। যার ফলে দেশের উন্নয়ন না করে তারা তাদের নিজেদের উন্নয়ন করেছেন।
করোনার কারণে প্রায় আড়াই বছর পর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠকে দেশ ও বিশ্বের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক সংকট, আগামী জাতীয় নির্বাচন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার এ বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এটাই ছিল এককভাবে প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বৈঠক।
বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের পক্ষ থেকেও বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাত্রলীগসহ দলের সব সংগঠনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যকার ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন সতর্কতার সঙ্গে চলে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সতর্কতার সঙ্গে গঠনমূলকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা আগামী দিনে দলকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী করতে হবে। বৈঠকে এ ছাড়া আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা হয়। এ সময় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মসিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।