বিদেশি ঋণ সহায়তায় নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৭ হাজার ৭০৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৩৩ পয়সা হিসেবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এর আগে ১০ মাসে এত বেশি বিদেশি ঋণসহায়তা কখনো আসেনি দেশে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ বিদেশি ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র দেখা গেছে।
ইআরডি থেকে জানা গেছে, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নতুন করে বাংলাদেশকে ৫৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (৪.৮৪ বিলিয়ন) ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতারা। এ সময়ে ঋণ ছাড় করেছে ৭৭০ কোটি ৮৫ লাখ (৭.৭০ বিলিয়ন) ডলার। এর মধ্যে ৭৫২ কোটি ডলার পাওয়া গেছে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪৮৫ কোটি ৫৩ লাখ (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করে দাতারা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে ঋণ ছাড় বেড়েছে ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৫২৭ কোটি ৫৪ লাখ (৫.২৭ বিলিয়ন) ডলারের ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাতারা।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাওয়া গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে। তারা ১০ মাসে ছাড় করেছে ১৯৮ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এরপরই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবস্থান। এ সময়ে সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের ১০ মাসে সংস্থাটি ১১৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
এছাড়া রাশিয়া ১০৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার ছাড় করেছে। চীন ছাড় করেছে ৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ২৯ কোটি ডলার, ভারত ২০ কোটি ডলার এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী ৫১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এডিবির কাছ থেকে ১১১ কোটি ডলার। ঋণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় ছিল এআইআইবির ৭১ কোটি, জাপানের ৫৩ কোটি এবং চীনের ১১২ কোটি ডলার। অর্থছাড় করলেও ভারত ও রাশিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, মহামারির কারণে রাজস্ব সংগ্রহ ধীরগতিতে হওয়ায় এখন অর্থের প্রয়োজন। এ কারণেই সরকার আরও বেশি বাজেট সহায়তা নিচ্ছে এবং উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তা ছাড়তে খুব বেশি সময় নিচ্ছে না। তবে প্রকল্প সহায়তার প্রাপ্তি ততটা বাড়ছে না।
ঋণ ছাড় পাওয়া নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা যতটা আশা করেছিলাম, তারচেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এতে করোনার টিকা খাতে ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ মেটাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে দ্রুত ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে।