চার মেয়েকে ফিরে পেয়ে বাবা বললেন, ‘আর আমি বকা দেব না’

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার সেই চার বোন
সংগৃহীত ছবি

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক চার বোনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দপ্তরে মা–বাবার কাছে চার বোনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ সময় শিশুদের বাবা মুজিবুল হক বলেন, আমি দুবাই ছিলাম। এখন আমার ইনকাম নাই। টাকা মেরে দিছে লোকজন। আমার কোনো পুত (ছেলেসন্তান) নাই। চার মেয়ে। সব মিলিয়ে আমি হতাশাগ্রস্ত। ওই কারণে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে বকাঝকা করতাম। ওরা যে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা জানতাম না। আর আমি (তাদের) বকা দেব না।

universel cardiac hospital

মা মাসুদা আক্তার বলেন, আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। গত এক সপ্তাহ আমি রান্না পর্যন্ত করিনি। মেয়েদের পেয়েছি, এটাই আনন্দ।

বাবার সঙ্গে রাগ করে গত ২৬ মে সকালে চার বোন তাসনিম জাহান (১৭), মারজাহান (১৪), তাজিন সুলতানা (১২) ও মাইশা সুলতানা (৬) বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মেয়েদের সন্ধান না পেয়ে গত শনিবার (২৮ মে) নাঙ্গলকোট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মুজিবুল হক। তাদের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউনিয়নের কালেম গ্রামে।

উদ্ধারের পর পিবিআই দপ্তরে তাসনিম জাহান বলে, নানাবাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলার নারুয়া গ্রাম থেকে প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে যায় তারা। এরপর সেখানকার বাসস্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে যায়। এরপর এক অটোচালকের মাধ্যমে ওই এলাকায় ২ হাজার ৫০০ টাকায় হালিমা বেগমের একটি বাসা ভাড়া নেয়। বাসাভাড়া বাবদ এক হাজার টাকাও অগ্রিম দেয়।

কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে পড়ে। তার ওপর টাকাও শেষ। সন্ধ্যার পর দোকান থেকে মা মাসুমা আক্তারকে ফোন করে। ফোন পেয়ে মাসুমা কান্নায় ভেঙে পড়লে তাসনিম জানায়, তারা কুমিল্লা শহরের জাঙ্গালিয়া এলাকায় আছে। রাতেই পুলিশ ও তার মামা সেখানে গিয়ে তাদের নিয়ে আসে।

শিশুদের উদ্ধার উপলক্ষে কুমিল্লা পিবিআই দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পিবিআইয়ের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার চার বোন নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পেরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানকে জানান। তাদের নির্দেশে অভিযান চালিয়ে চার বোনকে উদ্ধার করা হয়। তারা ভালো ছিল, কোনো সমস্যা হয়নি।

শেয়ার করুন