সীতাকুণ্ডে আগুন : ২২ জনের লাশ হস্তান্তর, অন্যদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে হতাহতদের স্বজনদের ভিড়
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে হতাহতদের স্বজনদের ভিড়। সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২২ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব লাশ হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

universel cardiac hospital

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগ নিহতদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। পরিচয় শনাক্তের পর লাশ হস্তান্তর করা হবে।

লাশ হস্তান্তর করা ২২ জন হলেন—হাবিবুর রহমান (২৩), রবিউল ইসলাম (১৯), মমিনুল হক (২৪), মহি উদ্দিন (২২), তোফায়েল ইসলাম (২২), আফজাল হোসেন, মো. সুমন (২৮), ইব্রাহিম হোসেন (২৭), ফারুক জমাদ্দার (৫০), মো. হারুন (৫৫), মো. নয়ন (২২), শাহাদাত হোসেন (২৯), শাহাদাত উল্লাহ মজুমদার, মো, রিদুয়ান (২৫), রানা মিয়া, তহিদুল হাসান, নাজিমউদ্দিন রুবেল, নিপন চাকমা, মিটু দেওয়ান, আলা উদ্দিন (৩৫), শাকিল তরফদার ও মো. মনিরুজ্জামান (২২)।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘বিস্ফোরণ ও আগুনে মোট ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪১ জনের লাশ চমেক হাসপাতালে আছে। বাকি আট জনের লাশ বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে। ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

বাকি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে নেতৃত্বে দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিআইডির এডিশনাল এসপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, যেসব স্বজন দুর্ঘটনায় নিখোঁজ আছে দাবি করছেন, তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিখোঁজের বাবা-মা, ভাই-বোন, কিংবা সন্তানদের মধ্যে যেকোনো দুজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেসব লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, সেগুলোর নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে।’

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ২২ জনের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষার পর হস্তান্তর করা হবে। তবে ডিএনএ রিপোর্ট পেতে প্রায় এক মাস সময় লাগবে। ততদিন এসব লাশ মর্গের ফ্রিজারে রাখা হবে।’

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএম ডিপোর একটি শেডে কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত হলে রোববার পর্যন্ত জ্বলতে থাকে।

আগুনে সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে কেশবপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা বিএম কনটেইনার ডিপো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ডিপো থেকে একের পর এক বের করে আনা হয় লাশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। শুরু হয়ে যায় স্বজনের দৌড়ঝাঁপ-ছোটাছুটি। ঘন ঘন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ।

স্মরণকালের ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় কমিটি

বিএম ডিপোর অগ্নিদুর্ঘটনা তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শেয়ার করুন