বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ছয় দফা হলো আমাদের স্বাধীনতার অনন্য দলিল। ১৯৬৬ সালে লাহোর কনভেনশনে ৬ দফা ঘোষণার সঙ্গে তা পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থ ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরের শক্তির কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। আইয়ুব থেকে শুরু করে তার পা-চাটা ফকা চৌধুরী, মোনেম খাঁ, সবুর খাঁ, কাজী মাহাবুদ্দিন প্রমুখ সরকারি নেতা এবং নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান, মমতাজ দৌলতানা, মাহমুদ আলী কাসুরী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, মওদুদী ও তার তস্য পদসেবী গোলাম আযম প্রমুখ বিরোধী বাঙালি-অবাঙালি নেতা ৬ দফার বিরোধিতায় মাঠ সরগরম করে তুলেছিল।
তিনি বলেন, ‘সেসময় আইয়ুব খান বলেছিলেন, অস্ত্রের ভাষায় ৬ দফার মোকাবিলা করা হবে। বিরোধীরা বলেছিলেন যে, এটা বিচ্ছিন্নতার এক নগ্ন দলিল। ‘
৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় মোকতাদির চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৬৬-এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কনভেনশন ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের বাস্তবতার আলোকে এবং বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সমন্বিত করে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কর্মসূচি তুলে ধরার সুযোগ বঙ্গবন্ধুকে এনে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই কনভেনশনে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা হিসেবে ৬টি দাবি উত্থাপন করেন, যা ঢাকায় এসে ৬ দফা কর্মসূচি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে প্রস্তাবিত পাকিস্তান ফেডারেশন বাস্তবে শান্তিপূর্ণ পথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বৈ আর কিছু ছিল না। পাকিস্তানিদের সঙ্গে এক ছাদের নিচে বসবাস করা যে বাঙালির পক্ষে অসম্ভব ও অপ্রয়োজনীয়- এ কথা ষাটের দশকে বাঙালি স্বার্থের একক মুখপাত্র হিসেবে দাঁড়ানো জাতির পিতা শেখ মুজিব জানতেন ও বুঝতেন। তার এই রাজনৈতিক দর্শনকে বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্যই তিনি ৬ দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের মানস গঠনের কাজে ব্যবহার করা হয় ৬ দফাকে। এ কারণেই আগরতলা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ মুজিব পাকিস্তান ভেঙে দিতে প্রয়াসী হয়েছেন- এত বড় অভিযোগও জনগণের মাঝে হালে পানি পায়নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ঊনসত্তরের ৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলকে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পথ জনগণের মানস গঠনকেও আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান, যা পরবর্তী সময় বাংলাদেশ প্রশ্নের সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে জনগণকে আর দ্বিধান্বিত করেনি।
তিনি বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে ৬ দফা কর্মসূচি এক মূল্যবান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, ৬ দফার প্রণেতা ও উপস্থাপক শেখ মুজিব ও তার তরুণ অনুসারীরা এ কথা ভালোভাবেই জানতেন যে, ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তান ফেডারেশন একটি অসম্ভব ও অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কোনোদিনই এটি মেনে নেবে না বা মেনে নিতে পারে না। ৬ দফাভিত্তিক ফেডারেশন মানেই হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তানের বিভাজন ও এক পাকিস্তানের মৃত্যু। ৬ দফার কোনো একটি দফাও পাকিস্তানের ঐক্যের পক্ষে ছিল না। বরং প্রতিটি দফাই বাঙালির স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ও অবশ্যম্ভাবিতাকে তুলে ধরেছিল।