ডব্লিউএফপির সতর্কবার্তা : দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্ভিক্ষ

মত ও পথ ডেস্ক

দুর্ভিক্ষ/দারিদ্র্য
ছবি : এপি

সারা বিশ্বের মানুষের জন্য আসছে আরও কঠিন সময়। দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্ভিক্ষ! এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ওপর সতর্কবাণী দিয়েছে সংস্থা দুটি। সোমবার ডব্লিউএফপির অফিশিয়াল সাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে ক্ষুধার হটস্পট হয়ে উঠতে পারে অন্তত ২০টি দেশ।

universel cardiac hospital

না-খেয়ে মারা যেতে পারে ছয়টি হটস্পট দেশের অন্তত সাড়ে সাত লাখ মানুষ। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে ৪৬টি দেশের চার কোটি ৯০ লাখ মানুষ। আর চলতি বছরের শেষ নাগাদ খাদ্যঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে ৩২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের।

ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ আর অনাহারের মতো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে সারা বিশ্ব। তাই জরুরি মানবিক পদক্ষেপের জন্য সতর্কতা জারি করেছে এফএও এবং ডব্লিউএফপি।

তাদের মে ২০২২ হাঙ্গার হটস্পট রিপোর্ট বলছে, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেন বিপর্যকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আফগানিস্তান এবং সোমালিয়াও উদ্বেগজনক শ্রেণিতে প্রবেশ করেছে। অনাহারে মারা যেতে পারে এসব দেশের অন্তত সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

করোনাপরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের সংঘাত ইতোমধ্যে এক বছরের বিপর্যয়কর ক্ষুধাকে আরও জটিল করে তুলেছে-যা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুধার তরঙ্গকে ভয়ঙ্কর করে দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী হটস্পটে প্রবেশ করেছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, হাইতি, সাহেল অঞ্চল, সুদান এবং সিরিয়া।

এ তালিকায় সম্প্রতি প্রবেশ করেছে কেনিয়াও। প্রতিবেদনে বলা হয় খরার পুনরাবৃত্তি, বন্যা, হারিকেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব দেশের মানুষ। শ্রীলংকা, পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় দেশগুলো (বেনিন, কাবো ভার্দে এবং গিনি), ইউক্রেন এবং জিম্বাবুয়েও হটস্পট দেশের তালিকায় রয়েছে। অ্যাঙ্গোলা, লেবানন, মাদাগাস্কার এবং মোজাম্বিকও রয়েছে এই তালিকায়।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা সাড়ে সাত লাখ মানুষের মধ্যে চার লাখই ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলের। বাকিরা আফগানিস্তান, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনের।

ডব্লিউএফপির জরুরি বিভাগের উপ-পরিচালক ব্রায়ান ল্যান্ডার বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ২০২২ সালে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবেদনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে অবশ্যই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা সাড়ে সাত লাখ মানুষের বিষয় উদ্বেগকে প্রাধান্য দিতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ভিক্ষ বা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ৪৬টি দেশের চার কোটি ৯০ লাখ মানুষের এই সংখ্যা সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাছাড়া ডব্লিউএফপির কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও ৮১টি দেশে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে ২৭ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ইউক্রেন সংকটের বাস্তবতায় চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ৩২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছতে পারে।

ল্যান্ডার বলেন, ‘পৃথিবীতে প্রত্যেককে খাওয়ানোর মতো পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। আর এ কারণেই ক্ষুধাকে রোধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যদি সময়মতো এসব মানুষের পাশে না-দাঁড়াতে পারি, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- তা অকল্পনীয়।’ এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ডব্লিউএফপি এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোর অগ্রিম তহবিল প্রয়োজন।

জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে সাড়া দেওয়া, সংকটের পূর্বাভাস দেওয়া এবং সংকটগুলোতে জনগণের পাশে থাকার জন্য সংস্থাগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে। আর সে কারণেই এসব ক্ষুধাতুর মানুষকে সহযোগিতার জন্য দাতাদেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে হবে।’

শেয়ার করুন