বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পণ্যের (জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল) একই পরিমাণ আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এসব পণ্যের বাইরেও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে আমদানিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।
‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, সরকার দেশে বর্তমানে বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায়। কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত অর্থনৈতিক শ্লথগতি থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি খাতের পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার যে কাউন্টার সাইক্লিক্যাল ব্যবস্থা নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের উদ্যোগের জন্য ৭৩ হাজার কোটি টাকা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণের তহবিল, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইএফডি) ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি এবং ২ শতাংশের বেশি সুদের হারে ভর্তুকি প্রদান এবং ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প।
‘সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, রপ্তানি পণ্যের জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান, পরিবহন ও ইউটিলিটি সুবিধার উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অগ্রাধিকার এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ অ্যান্ড এফটিএ) ইত্যাদি স্বাক্ষরের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। উপরন্তু সরকার রপ্তানি বাড়াতে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। পাশাপাশি সরকার রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানি ভর্তুকি/প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বল্প-আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে সে জন্য সরকার ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করছে। শহর অঞ্চলে ওএমএস-এর আওতায় চাল ও গম বিক্রয় অব্যাহত রয়েছে। রমজানে ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে ৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে যাদের কাছে ডিজিটাল ব্যবস্থায় নগদ অর্থ দেওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুতকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুত খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেবো না।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় চলতি অর্থবছরেও বাজেট প্রণয়নের অংশ হিসেবে আমি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সংলাপ করেছি। এছাড়া মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে বাজেটের ওপর প্রস্তাবনা পেয়েছি। এজন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এসব আলোচনা, প্রস্তাবনা ও আমাদের বিশ্লেষণে আগামী অর্থবছরের প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ হবে: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ার জন্য বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান, বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের উচ্চ-অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন; অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর সংগ্রহের পরিমাণ এবং ব্যক্তি আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা।