গত ২২ এপ্রিল বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিতেই বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছিল বহুল ব্যবহৃত এই ভোজ্যতেলের দাম। ২৮ এপ্রিল কার্যকর হয় ওই সিদ্ধান্ত। আর তার পরেরদিনই (২৯ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম পৌঁছায় প্রতি টন রেকর্ড ৭ হাজার ১০৬ মালয়েশীয় রিঙ্গিতে (১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়)। তবে এরপর থেকে গত দেড় মাসে পাম তেলের দাম কমেছে টনপ্রতি ৯০০ রিঙ্গিতের বেশি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রেডিং ইকোনমিকসের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
জানা যায়, গত মার্চ মাসের শুরুর দিকে একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম উঠেছিল প্রতি টন সর্বোচ্চ ৭ হাজার ২৬৮ রিঙ্গিতে, যা সর্বকালের রেকর্ড। তবে এরপর থেকে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর আসেনি।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য বলছে, গত ৯ মার্চ বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম ছিল প্রতি টন ৭ হাজার ৭৫ রিঙ্গিত। তবে ১৮ মার্চ এর দাম নেমে যায় ৫ হাজার ৬০৯ রিঙ্গিতে। ২৩ মার্চ প্রতি টন পাম তেল ৬ হাজার ২০০ রিঙ্গিতে গেলেও এরপর থেকে অনেকটা ধারাবাহিকভাবে কমে এপ্রিল মাসের ১ তারিখে এর দাম দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৬১ রিঙ্গিত।
এরপর থেকে আবার আবার বাড়তে শুরু করে এই ভোজ্যতেলের দাম। গত ২২ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার ঘোষণার পর থেকে চড়চড় করে উঠতে থাকে মূল্যবৃদ্ধির সূচক। একপর্যায়ে ২৯ এপ্রিল প্রতি টন পাম তেলের দাম দাঁড়ায় ৭ হাজার ১০০ রিঙ্গিতের বেশি। কিন্তু এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে বাজার পরিস্থিতি।
গত দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দামে নিয়মিত উত্থান-পতন হলেও এই সময়ে এর সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতি টন ৬ হাজার ৫৩৩ রিঙ্গিত, আর গড় হিসাব করলে দাম ছিল মোটামুটি ৬ হাজার ৪০০ রিঙ্গিতের আশপাশে।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম কমেছে একলাফে ২৫৭ রিঙ্গিত। এদিন পাম তেল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ২১০ রিঙ্গিতে।
অর্থাৎ গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৯ জুনের মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি টন (১০০০ কেজি) পাম তেলের দাম কমেছে অন্তত ৯০৩ রিঙ্গিত, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৯ হাজার ৯৪ টাকা প্রায়।
অবশ্য সয়াবিন নিয়ে এমন কোনো সুখবর নেই। গত দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে নিয়মিত। চলতি জুন মাসেই প্রতি বুশেল (২৭ দশমিক ২১ কেজি) সয়াবিনের দাম ১৭ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে তা ২০১২ সালের সর্বোচ্চ ১৮ ডলার প্রতি বুশেল রেকর্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কারণ হিসেবে ট্রেডিং ইকোনমিকস বলছে, বৃহত্তম ভোক্তা চীন লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সয়াবিন কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সার সরবরাহে সংকট। এর ফলে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো শীর্ষ সয়াবিন উৎপাদক দেশগুলোতে উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।