আপিল বিভাগ বলেছেন, জুরাইনের ঘটনায় পুলিশ যদি অপরাধ করে তার বিচার হবে, আইনজীবী অপরাধ করলে তারও বিচার হবে। যে যতটুকু অপরাধ করেছে তার বিচার হবে।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন।
আদালত রিটের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বিচারিক আদালতে দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন করুন। তারা জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করুন। হাইকোর্টে জামিন না দিলে তারপর আমরা দেখব।
পরে আদালত আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন এবং শুনানি মুলতবি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
গত ১২ জুন রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগের মামলায় দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় মামলার নথি তলবের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।
এর আগে ৮ জুন রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই আইনজীবীসহ ৫ জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
এদিকে মামলার একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান ভুইয়া নিশানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে রিমান্ড আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সময় জুরাইন রেলগেট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক দাবি করেন, ৭ জুন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকা সত্ত্বেও উল্টোপথে মোটরসাইকেলে করে আসছিলেন রনি ও নিশান। এ সময় সার্জেন্ট মো. আলী তাদের গতিরোধ করে কাগজপত্র চাইলে তার ওপর চড়াও হন মোটরসাইকেল আরোহীরা। এ সময় তারা আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে পুলিশের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। পরে নিশান তার ছোটভাই ইয়াসিনকে ফোন করে লোকজনসহ আসতে বলেন।
এদিকে খবর পেয়ে ইয়াসিন সাড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে সার্জেন্ট মোহাম্মদ আলীর ওপর এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে রক্তাক্ত ও জখম করে। পাশাপাশি হামলাকারীরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর শুরু করে।
ঘটনাস্থলে আসা কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল দত্ত অপু মারধরের শিকার হন। বর্তমানে সার্জেন্ট মো. আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। আর এসআই উৎপল দত্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ওই ঘটনায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে সাড়ে ৪শ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘটনার সূত্রপাতের পরপরই জুরাইন রেলগেট পুলিশ বক্সের ভেতরে ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করে সোহাগ-উল ইসলাম রনি বলেন, ঘুষ নেওয়ার সময় তিনি উপস্থিত হলে পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। পুলিশ বক্সে এনে মারধর করে। পরে উত্তেজিত জনতা পুলিশ বক্সে হামলা করে ও পুলিশ সদস্যদের মারধর করে।
পুলিশের ওপর হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে অনেকেই বলছেন, হয়রানির প্রতিবাদে জুরাইনের স্থানীয়রা পুলিশ সদস্যদের মারধর করেছেন।