চাল রপ্তানিতে লাগাম টানার পরিকল্পনা নেই : ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চাল
চাল। ফাইল ছবি

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মাঝে চলমান বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে ভারত চাল রপ্তানিতে লাগাম টানতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়ালেও তা নাকচ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। সোমবার ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক ভারতের চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং রপ্তানি সীমিত করার কোনও পরিকল্পনা নেই।

বিশ্বজুড়ে দাম বৃদ্ধির কারণে গত ১৩ মে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। রপ্তানি নিষিদ্ধ করলেও দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশ, যারা খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হয়েছে, তাদের জন্য জিটুজি ভিত্তিতে সরবরাহ চালু রাখে।

এরপরই চালের রপ্তানিতে এশিয়ার এই দেশটি বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এই বিষয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেছেন ভারতের খাদ্য সচিব সুধাংশু পাণ্ডে।

চাল রপ্তানির লাগাম টানার কোনও পরিকল্পনা ভারতের আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‌‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণের চেয়েও বেশি চালের মজুত রয়েছে। তাই এর রপ্তানি সীমিত করার কোনও পরিকল্পনা নেই।’

গত মাসে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করার ভারতের আকস্মিক সিদ্ধান্তের পর চাল রপ্তানির সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমদানিকারকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়। যে কারণে ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি করে চাল কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন এবং অনেক পরের তারিখেও সরবরাহ পাওয়ার জন্য চালের অর্ডার করছেন।

ভারতের সরকার ও বাণিজ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম চালের রপ্তানিকারক ভারতের আপাতত চালানের লাগাম টানার কোনও পরিকল্পনা নেই। স্থানীয় বাজারে চালের দাম এখনও কম এবং রাষ্ট্রীয় গুদামেও প্রচুর মজুত রয়েছে।

দেশটির এই ঘোষণা ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান দামের সাথে ধুঁকতে থাকা আমদানি-নির্ভর দেশগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি করেছে। কিন্তু ভারতের ধান উৎপাদনের মৌসুম শুরু হতে এখনও অনেক দেরী এবং ফসল উৎপাদনে কোনও ব্যত্যয় ঘটলে তা দেশটির প্রধান এই খাদ্য শস্য রপ্তানির নীতিতেও পরিবর্তন আনতে পারে।

ভারতে চালের উৎপাদন কেমন হবে তা অনেকটা মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে। চলতি বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তা বিশ্বজুড়ে চাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করবে দেশটিকে।

তবে বর্ষাকালে যদি অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়, সেক্ষেত্রে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হবে এবং ফলন কমে যাবে। এর ফলে দেশটির চাল উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে দেশের ১৪০ কোটি মানুষের পর্যাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রপ্তানিতেও লাগাম টানতে হতে পারে।

অভ্যন্তরীণ উচ্চ মজুত আর স্থানীয় বাজারে কম দামের কারণে গত দুই বছর ব্যাপক ছাড়ে চাল বিক্রি করেছে ভারত। যা এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশকে গমের দামের ঊর্ধ্বগতির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করেছে।

বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে চাল রপ্তানি করে ভারত। দেশটির চালান হ্রাস পেলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য চাল। ২০০৭ সালে ভারত যখন চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে তখন বিশ্ববাজারে এর দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

ভারতের চালের রপ্তানি মূল্যও গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। দেশটির সরকারের নির্ধারিত ১৩ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চারগুণ বেশি— ৫৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন টন চাল ও ধান সরকারি গুদামে মজুত রয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স।

শেয়ার করুন