বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে প্রথম থেকে অদ্যাবধি অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে। এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে যাঁরা জানেন-বুঝেন তাঁরা কিন্তু রাটিও করছেন না। আমরা মনে করি নির্বাচন নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে গঠিত কমিশনের যা করা দরকার তা হচ্ছে সংবিধান ও পঠিত শপথের প্রতি শতভাগ আনুগত্য। বর্তমান কমিশনের অন্ততঃ দুজন তো সংবিধান ও শপথের গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম (করেন কি না, তা তাঁদের কর্মকাণ্ড দৃষ্টেই প্রতীয়মান হবে)। আরও দুজন আছেন যাঁদের সংবিধান ও শপথের গুরুত্ব বুঝার কথা। অন্য একজন আছেন তিনি এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবহিত নন।
আমাদের হিসাব মতে যদি তাঁরা সংবিধান ও শপথ অনুধাবন করে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠাবান হন তাহলে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব। অন্যথায় নয়।
কমিশনকে বুঝতে হবে যে, তাঁরা সংবিধান ও শপথের কাছে দায়বদ্ধ। কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আনুগত্য বা দায়বদ্ধ থাকার কোনো সুযোগ আদৌ নেই। রাজনৈতিক কোনো গোষ্ঠীর বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন তাদের কাজ নয়। বাংলাদেশে সম্ভবতঃ ৩/৪টি নির্বাচন এমন হয়েছে যেখানে, কমিশন যথাযথ সাংবিধানিক দায়িত্ব ও শপথের আনুগত্যের প্রতি সৎ ছিল। শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে পারেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কী সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে কোনো বাধাকেই অন্তরায় মনে না করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে? ব্যক্তি পর্যায়ে তাঁদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই। প্রয়োজন শুধু সংবিধান ও শপথ সম্পর্কিত আনুগত্যের প্রতি নিষ্ঠাবান কতটুকু তা দেখা।
জাতীয় নির্বাচনের আগেই যদি কমিশনের সাংবিধানিক ও শপথীয় আনুগত্য ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে, তা বলে কমিশন যে উদ্দেশ্যে গঠিত (নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠান) তা বাস্তবায়ন হবে কিভাবে? কমিশনের দক্ষতা ও নিষ্ঠা নিয়ে যেন প্রশ্ন না উঠে, সেদিক কমিশনকে নজর দিতে হবে। অন্যথায় তথাকথিত বিশিষ্টজন আর বুদ্ধিবিক্রেতাদের অযাচিত পরামর্শ ও কথকতা চলতেই থাকবে। যা কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক চেহারায় মলিনতা এনে দিবে। অতএব, সাধু সাবধান।