সরকারপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লিখে চাকরি হারালেন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি ‘রহমান হেনরী’ নামে কবিতা লেখেন।
সোমবার (১৩ জুন) তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সাইদুর রহমান সর্বশেষ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে ওএসডি করা হয়।
চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাইদুর রহমান ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ৪৬ মিনিটে তার ফেসবুক আইডি ‘রহমান হেনরী’ থেকে ‘রহমান হেনরী’ ছদ্মনামে একটি কুরুচিপূর্ণ, অশোভন ও আপত্তিকর কবিতা প্রকাশ করেন। এটি একদিকে একজন সরকারি কর্মচারীর পক্ষে অশোভন ও অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ এবং অন্যদিকে এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয় এবং একই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত শুনানি চান কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর আলোকে তিনি লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করেন। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয। লিখিত জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানির বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, তদন্তে সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪ (৩)(ঘ) অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশের জবাবও সন্তোষজনক হয়নি। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও তিনি সরকারপ্রধানকে ইঙ্গিত করে যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কবিতা প্রকাশ করেছেন, তা তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
রহমান হেনরীর কবিতার বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বনভোজনের মতো অন্ধকার’, ‘গীতঅনার্য’, ‘প্রকৃত সারস উড়ে যায়’, ‘সার্কাসমুখরিত গ্রাম’, ‘খুনঝরা নদী’, ‘তোমাকে বাসনা করি’, ‘গোত্রভূমিকাহীন’, ‘দুঃখ ও আরও কিছু আনন্দ’, ‘ব্রজসুন্দরীর কথা’, ‘প্রণয়সম্ভার’। এছাড়া তার কিছু অনুবাদগ্রন্থও রয়েছে।