মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই শুরু হয়েছে ষষ্ঠ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’। শুরুতেই দেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীর গণনা শুরু হয়। আজ বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যাওয়া কর্মসূচি। সপ্তাহব্যাপী এই জনশুমারি ও গৃহগণনা শেষ হবে ২১ জুন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। শুমারি শুরুর আগে মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাত ১২টাকে ‘শুমারি রেফারেন্স পয়েন্ট বা সময়’ হিসেবে ধরা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন। এসময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন’ প্রতিপাদ্যে ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। ১০ বছর পর এই শুমারি হয়ে থাকে। ডিজিটাল শুমারিতে প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ৩৫ ধরনের তথ্যসহ আরও ১০টি সহায়ক তথ্য নেওয়া হবে। এতে করে একজন নাগরিকের মোট ৪৫ ধরনের তথ্য নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি ষষ্ঠ জনশুমারি হতে যাচ্ছে। যেখানে সবমিলে ৪৫টির মতো প্রশ্ন। একটি দেশের জন্য এই শুমারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবারের শুমারিতে গড়ে দুই কোটির মতো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এবারও হয়তো এর কাছাকাছি কমবেশি বাড়বে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই শুরু হচ্ছে, যা ২১ জুন মধ্যে রাতে শেষ হবে। কেউ যেন বাদ না যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক তাজুল বলেন, দেশের প্রথম জনশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি’কে ‘জনশুমারি’ বলা হয়। বিশ্বের সব দেশে জনশুমারি এবং গৃহগণনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক ভিত্তিক পরিসংখ্যান কার্যক্রম। সবাই এতে অংশ নেবেন, সহযোগিতা করবেন। আজ মধ্যরাত থেকেই কার্যক্রমে চলে যাচ্ছি, আমরা এমন কোনো তথ্য চাচ্ছি না, যাতে আপনার ক্ষতির কারণ হবে, তাই দেশের নাগরিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, প্রথমে ভাসমান ছিন্নমূল মানুষগুলোকে গণনার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে একটা চিত্র পেয়েছি, এরা কোথায় থাকে। রাতে কমলাপুর, সদরঘাট, কারওয়ান বাজারের মতো যেখানে থাকে বা থাকতে পারে সেখানে গণনা হবে। সব শহরেই হবে, পাশাপাশি যদি গ্রামে কেউ ভাসমান থাকে সেও আওতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে। একটি ওয়েবভিত্তিক ইনটিগ্রেটেড সেনসাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) প্রস্তুতসহ জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমে (জিআইএস) গণনা এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের কন্ট্রোল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।
জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে শুমারি কর্মী হিসেবে সারাদেশে প্রায় তিন লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ গণনাকারী, ৬৩ হাজার ৫৪৮ জন সুপারভাইজার, আইটি সুপারভাইজার ৩ হাজার ৭৭৯, জুনাল অফিসার ৩ হাজার ৭৭৯, জেলা শুমারি সমন্বয়কারী ১৬৩ বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারী ১২ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে গত ২০২১ সালের আদমশুমারির জনসংখ্যা অনুযায়ী ১৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩ হাজার ৪৯৮ জন। এবার আদমশুমারি গণনা করতে কাজ করবেন তিন লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন, যার ফলে ৪৫৫ জন মানুষের গণনাকারী একজন।
ব্যক্তি মডিউল হিসেবে থাকবে সদস্যদের ক্রমিক নম্বর, খানার সদস্যদের নাম, বয়স, লিঙ্গ, খানা প্রধানের সঙ্গে সম্পর্ক, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধী হলে তার ধরণ, পড়তে লিখতে পারেন কি, বর্তমানে শিক্ষার্থী কি? সর্বোচ্চ শ্রেণি পাস, পাসের ক্ষেত্র, কাজের মর্যাদা, কর্মরত হলে কাজের ধরন, কর্মরত হলে কাজের ক্ষেত্র, বর্তমানে কোনো প্রশিক্ষণে নিয়োজিত আছেন কি? নিজস্ব ব্যবহারের মোবাইল ফোন আছে কি? মাসে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন কি? এসব তথ্যও নেওয়া হবে। ব্যাংক/বিমা/ডাকঘর/সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট আছে কি? মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট ও নগদ অ্যাকাউন্ট আছে কি? ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোড যদি হয়ে থাকে, জাতীয়তা কি? বাংলাদেশি হলে নিজ জেলা, বিদেশি হলে দেশের নাম লিখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালিত হয় ১৯৭৪ সালে। এরই পর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ এবং পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম শুমারিতে সাত কোটি ১৫ লাখ মানুষ ছিল, যা সর্বশেষ ২০১১ সালের শুমারিতে ১৪ কোটি ৯৮ লাখ।