ফিলিস্তিনের গাজায় পাঁচ শিশুর মধ্যে ৪ জন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের ১৫ বছর পূর্তিতে সেভ দ্য চিলড্রেন এ তথ্য প্রকাশ করল। খবর এএফপির।
ফিলিস্তিনের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের সদস্যরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েল গাজা অবরোধ করে। ইসরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকা থেকে মানুষজনের যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আনা নেওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে ‘ট্র্যাপড’ নামের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে গাজা উপত্যকায় শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা, দুঃখ ও ভয় ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জন্য সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক জেসন লি বলেন, প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমরা যেসব শিশুর সঙ্গে কথা বলেছি, তারা প্রায় প্রত্যেকেই ভয়, উদ্বেগ, দুঃখ এবং শোকের চিরস্থায়ী অবস্থায় জীবনযাপন করার কথা বর্ণনা করেছে। তারা আবার কখন সহিংসতা ঘটবে, তার অপেক্ষায় থাকে। এ জন্য তারা ঘুমাতে বা কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না।
জেসন লি আরও বলেন, শিশুদের মানসিক সমস্যার প্রমাণ হিসেবে তাদের বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, কথা বলতে না পারা বা সাধারণ কাজগুলো ঠিকমতো করতে না পারার মতো বিষয়গুলো লক্ষ করা যায়। এ মর্মান্তিক বিষয়গুলো দেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরিভাবে জেগে উঠতে হবে।
গাজার প্রায় ২১ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, গাজার ৮ লাখের বেশি শিশু–কিশোর বাধাহীন জীবন কী, সেটাই জানে না।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের জনগণকে হামাসের হাত থেকে রক্ষার জন্য গাজাবাসীকে অবরুদ্ধ রাখা জরুরি। হামাসকে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে। ২০০৭ সালের পর থেকে হামাসের সঙ্গে চার দফা লড়াই হয়েছে ইসরায়েলের। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামাস সদস্যদের লড়াই হয়েছে। গত এক বছরে ইসরায়েলের ভেতরে গাজার কিছু লোকজনকে কাজের সুযোগ দেওয়া হলেও গাজা উপত্যকার অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এর মধ্যে এরেজ ক্রসিং দিয়ে গাজা ছেড়ে ইসরায়েলে যেতে এবং রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিশরে যাওয়ার পথে গাজাবাসীকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
ওই অবরুদ্ধ অবস্থার ১৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিশরের সহায়তায় ইসরায়েল গাজাকে এক উন্মুক্ত কারাগার তৈরি করে রেখেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের পরিচালক ওমর শাকির বলেন, গাজার শিশুরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ, তারা জানে না এই অবরুদ্ধ পরিস্থিতির আগে উন্মুক্ত শহর কেমন ছিল। তাদের দুনিয়া ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ আর ১১ কিলোমিটার প্রস্থের একটা ঘেরা ভূখণ্ডে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত হতে না পারে।