কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। কিছুটা উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। তবে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে কয়েকটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে রৌমারীতে রাস্তা-ঘাট থেকে পানি না নামায় দুর্ভোগ কমেনি মানুষের। বন্যার পানি প্রবেশ করায় উপজেলার ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বিভাগ। উপজেলার ৯৩৫ হেক্টর জমির ধান, ৯০৩ হেক্টর জমির পাট, ৭৮ হেক্টর জমির তিল ও ১৪৭ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, বুধবার থেকে কিছুটা পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমার ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের মাঝে কিছু শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানতে পেরেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজ পানিবন্দি মানুষজনের মাঝে প্রাথমিকভাবে ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।
অন্যদিকে জেলা সদর, ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও চিলমারীসহ কয়েকটি উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে এসব নদ-নদী অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছেন। অনেকের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় ধান, চাল, চুলা ও শুকনো খড়িসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চৌকি কিংবা উঁচু স্থানে তুলে রেখেছেন তারা।
জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার জহুরুল বলেন, তিনদিন ধরে বাড়িতে পানি থাকলেও সেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ঘরে প্রবেশ করেছে। এতে করে ধান, চাল, শুকনো খড়ি ও চুলাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চৌকিতে তুলেছি। রান্না করে খাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পরিবার নিয়ে আতংকে রাত কাটাচ্ছি।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের একাধিক ইউপি সদস্যের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী, মুছল্লীপাড়া, কালির আলগা, মন্ডলপাড়া, পশ্চিম মুছল্লী পাড়া, ঝুনকার চর, ভগবতীপুর ও পার্বতীপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি এসব পরিবারের মানুষজন নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছেন।
অপরদিকে গত কয়েক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্রের আগ্রাসী ভাঙনের কবলে পড়ে ইউনিয়নের পোড়ারচর, গোয়াইলপুরী ও পূর্ব তিন হাজারী এলাকার প্রায় ৪৫টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এসব পরিবার বসতবাড়ী সরিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসতি গড়েছেন। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এই তিন এলাকার আরও অন্তত ৭-১০টি বসতবাড়ী।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত সাত দিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে এসব এলাকায় বসতরত পরিবারগুলো নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এসব এলাকার কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলজার হোসেন মন্ডল জানান, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সন্ন্যাসীর চর, মদাজলের নিম্নাঞ্চল, চর সারডোব, ছাট কালুয়া, লক্ষ্মীকান্তসহ হেমের কুটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, আমি সকাল থেকে প্লাবিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছি। পরে বিস্তারিত জানাব।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে জেলার চরাঞ্চলগুলিতো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।