বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের সাবেক ধুরন্ধর মুখপাত্র জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিনী অধ্যাপক ডক্টর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী শক্তির নিকট পরাজিত হয়েও পরাজয়ের গ্লানি চেপে রেখে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ১৯৭২ সালে। তখন তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির (তাঁর ধরনের বিশ্লেষণ) খুবই করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ হবে ‘আন্তর্জাতিক তলাবিহীন ঝুড়ি” (International buscket case)। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ধনাঢ্য গোষ্ঠী বাংলাদেশকে যে সাহায্যই দেবে তা তলাবিহীন ঝুড়ির মতো সব সাহায্যই ক্ষুধার্তদের পেটে চলে যাবে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতা দেশটির আর্থিক উন্নয়নে কোনই কাজে আসবে না।
সাম্রাজ্যবাদের ঘড়েল মোড়লদের অন্যতম নষ্ট প্রবক্তা তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিজয়ী জাতির আত্মশক্তির প্রতি কটাক্ষ করে পরাজয়ের ক্ষোভ নিভাতে চেয়েছিলেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও তার ততোধিক স্বাধীন চেতা রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য কিসিঞ্জার উক্তিটি ছিলো খুবই অপমানজনক অতিথি পরায়ন বাঙালির শ্রেষ্ঠ বাঙালির সন্তান বঙ্গবন্ধু মুখের ওপর কিসিঞ্জারকে কিছু না বললেও তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাঁর অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদও। কিসিঞ্জারের উক্ত অসৎ উক্তির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ তার কর্মযজ্ঞ দ্বারা রুখে দাঁড়িয়েছিল। শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে চলেছিল। কিসিঞ্জার বন্ধু পাকিস্তানিদের দ্বারা নিঃশেষিত বাংলার পুনর্গঠন বিশ্ববাসীর নজড় কাড়তে সক্ষম হয়েছিল। পাকিস্তান বন্ধু মার্কিন-চৈনিক বৈরীতা সত্বেও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে উদাহরণ রেখে এগিয়ে যায়। একটি প্রাদেশিক সরকারের মৃত ও ধ্বংসস্তুপের উপরে নির্মাণ চলছিল একটি পূর্নাঙ্গ রাষ্ট্র নির্মাণ ও কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তোলার অনিঃশেষ কর্মকাণ্ড।
আরও পড়ুন >> নির্বাচন : যত কথা যত ভাবনা
সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশ কখনোই তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল না। বিশেষতঃ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তো নয়ই। তাহলে কেন বাজেট বক্তৃতায় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন যে ‘শেখ হাসিনা আছেন বলেই তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ।’ শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’-এর সাথে কি তিনি তুলনা করলেন না? তিনি এটা বুঝে করেছেন, নাকি না বুঝে করেছেন, তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু তাঁর এ বক্তৃতা মন্ত্রিসভা কি করে পাশ করলো?
লেখক : সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা,
পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।
আরও পড়ুন >> ‘রাজনীতি–সেই সময় আর এই সময়’