বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছিল। তবে এবার লিটারে কত টাকা বাড়বে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী। জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি খাতকে এটি প্রভাবিত করে। বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেশি, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ভাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিতে নতুন করে চাপ তৈরি করবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানায়, ডিজেল ও অকটেন বিক্রি করে তাদের প্রতিদিন ১০৭ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল কিনে সরবরাহ করতে তাদের খরচ পড়ছে ১৩৭ টাকা। বিক্রি করছে ৮০ টাকায়। বাকি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। একইভাবে প্রতি লিটার অকটেনে খরচ হয় ১২৪ টাকা। বিপিসি তা বিক্রি করছে ৮৯ টাকায়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী মাসে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে দাম বাড়ানো হলেও তা সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। সাধারণ মানুষের জন্য বড় বোঝা হয়ে যায়—এমন কিছু করা হবে না। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও তখন কমানো হবে।
সাধারণত জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির তুলনায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ভাড়া অনেক বেশি বাড়ার প্রবণতা আছে। পরিবহনভাড়া বাড়ার অজুহাত দিয়ে আরো বেশি বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। গতবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর তুলনায় পরিবহন মালিকরা অনেক বেশি ভাড়া বাড়িয়েছিলেন। আর ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কারণ সেচসহ কৃষিতে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন জ্বালানি তেলের দাম কিছু বাড়ানো হলেও পরিবহনভাড়া একই রাখা উচিত। কারণ গতবার তারা ভাড়া অনেক বাড়িয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগও আছে। যদিও পরিবহন বিশেষ করে বাস মালিকরা দাবি করছেন, বাস চালিয়ে তারা লাভ করতে পারছেন না।
জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, গত চার মাসে শুধু ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির লোকসান হয়েছে চার হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে লোকসান হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা, মার্চে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, এপ্রিলে এক হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা এবং মে মাসে এক হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, গত মার্চেও বিপিসির ৩২ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সক্ষমতা ছিল। সেটা কমে ২৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। মূলত প্রকল্পের জন্য যে টাকা রাখা ছিল তা দিয়ে বাড়তি ব্যয় চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এভাবে আগামী জুন-জুলাই কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলেও তারপর আর তাঁদের আর্থিক সক্ষমতা থাকবে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ালে অনেক ভালো হতো। কারণ সব ধরনের পণ্যের দাম বেশি। ডলারের অবমূল্যায়নে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর এক ধরনের চাপ আছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা আরো কঠিন হবে।