সৌদি আরবের পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারায় দুবাইভিত্তিক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বিইয়াতে কর্মরত ১৭০০ বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সিলর কাজী ইমদাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ কোম্পানিতে ২ হাজার ২২৫ জন বাংলাদেশি কাজ করেন। তিন বছর আগে দাল্লা কোম্পানিতে কাজ না থাকায় প্রায় চার হাজার শ্রমিককে বিইয়া ও মাজাল্লা কোম্পানিতে স্থানান্তর করা হয়। তার মধ্যে বিইয়াতে ২ হাজার ২২৫ জন বাংলাদেশি স্থানান্তর হয়ে সেখানে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। তবে কাজ শুরুর পর কিছু সমস্যা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে কোম্পানির লোকজন বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে এক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। যেটা সৌদি আরবের আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
কাউন্সিলর কাজী ইমদাদুল হক আরও জানান, গত ১৪ জুন সকালে আমরা যখন ঘটনা জানতে পারি তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ওই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমি ও প্রথম সচিব আরিফ এবং আমার টিম ওই কোম্পানিতে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলি। আরিফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। পরে আমরা কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, কোম্পানির স্বার্থে শ্রমিকদের রাখা সম্ভব নয়। এটা দুবাই হেড অফিসের সিদ্ধান্ত।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলকে আমরা জানাই। এর পর রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে মদিনায় আমরা ওই কোম্পানিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করি। গত বুধবার আমরা মদিনায় শ্রম ডিজি ড. সালেহ রাব্বি আল সোহাইমী এবং মানবসম্পদ ডিজি ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ইঞ্জি. আবদুল্লাহ গাজী আলসায়েদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শ্রমিকদের দেশে ফেরত না পাঠাতে অনুরোধ জানাই।
তারা আমাদের জানান, কোম্পানি যদি চায় তারা শ্রমিক রাখবে না তাদের সেই অধিকার আছে। আমাদের কাজ হলো শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো অন্যায় হচ্ছে কিনা, বেতনভাতা পরিশোধ করছে কিনা এটা দেখা। এ কোম্পানি আমাদের সম্পূর্ণ বিষয়ে অবগত করেছে এবং তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো অন্যায় করছে না।
শ্রম কাউন্সিলর আরও জানান, বিইয়া কোম্পানির কাছে তারা অনুরোধ করেছেন যেন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা না করা হয় এবং তাদের দেশে না পাঠায়। এ অনুরোধে যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না তাদের মধ্য থেকে ৫০০ জনকে রাখার কথা জানান কোম্পানির কর্মকর্তারা। বাকি শ্রমিকদের তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে পর্যায়ক্রমে তাদের দেশে পাঠানোর কথা।
এদিকে বিইয়া কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুপারভাইজার মো. আকরাম বলেন, তিন বছর আগে বিইয়া কোম্পানিতে যখন শ্রমিকদের স্থানান্তর করা হয়, সে সময় কোম্পানির লোকজন তিন মাস গড়িমসি করে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আকামা ও বেতন নিয়ে কোম্পানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা এটাকে আন্দোলন বলে চালিয়ে দেয়।
কোম্পানির ভেতরে মারামারি ও কর্মবিরতির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, একসঙ্গে থাকতে গেলে টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি হয়। পরে আমরা মিলেমিশে কাজ করি। কিন্তু যখন কোম্পানির লোকজন খারাপ ব্যবহার করে, বেতন না দিয়ে কথায় কথায় দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়, এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রাম নিষেধ। তার পরও কেন তারা আন্দোলন করলেন জানতে চাইলে আকরাম বলেন, আন্দোলন করিনি অধিকার আদায়ের কথা বলেছি, তারা এটাকে আন্দোলন বলে। কতজন শ্রমিক দেশে পাঠানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৭০০ শ্রমিকের ফাইনাল এক্সিট দিয়ে দেশে পাঠাবে আর বাকি কিছু শ্রমিকদের কোম্পানি কাজ দেবে। গত বুধবার লাইনে দাঁড় করিয়ে শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করে সঙ্গে সঙ্গে ফাইনাল এক্সিট দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।