কিশোরগঞ্জে ৭০০ গ্রাম পানির নিচে, দুর্ভোগে মানুষ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

সিলেট-সুনামগঞ্জের পর বন্যা এবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে কিশোরগঞ্জে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সব নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আরও প্রায় এক লাখ মানুষ।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আজ জেলার ১৩ উপজেরার মধ্যে নয়টি উপজেলার ৬২ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ইটনা, অষ্টগ্রাম, তাড়াইল, নিকলী, ইটনা, মিঠামইন অষ্টগ্রাাম, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর ও ভৈরব উপজেলার মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটনার নয় ইউনিয়নেই পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া অষ্টগ্রামের ৮টি, মিঠামইনের ৭টি, করিমগঞ্জের ৮টি, নিকলীর ৬টি কটিয়াদীর ৪টি, বাজিতপুরের ৮টি ও ভৈরবের ৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে একাকার হয়ে গেছে। নতুন করে আরও ৫০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পুরো জেলার সাত শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার নৌকা ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বসতবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে প্রবল বেগে পানি এখনও বাড়ছে। এ অবস্থায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন।

দুর্গত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা প্লাবিত গ্রামে চাল বরাদ্দ করে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বন্যায় ৭০০ গ্রামের এক হাজার ৫০৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ৬২ ইউনিয়নে মোট ১৫৪ আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। মোট ১২ হাজার ৭৪৮ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। দুই হাজার ৪৭ গবাদি পশুকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিসা আক্তার বলেন, ইটনা উপজেলার বন্যার অবস্থা ভয়াবহ। উপজেরার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দুর্গত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ফলে তাদের খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ খাবার পানি অভাব রয়েছে।

নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান জানান, ইতোমধ্যেই নতুন করে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ হাওরের ওপর প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় এক ফুট বেড়েছে। বিশেষ করে কালনী-কুশিয়ারার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১১.৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বিশেষ করে মেঘনা নদীর পানি ভৈরবে বিপদ সীমার ৫.৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন