পদ্মা সেতুর শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আজ বুধবার ঠিকাদার আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সেতুর সব কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে টেকিং ওভার সার্টিফিকেট দেয়।
বুধবার ঠিকাদারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাতে সই করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানিয়েছেন, সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রোড মার্কিং, রেলিং স্থাপনসহ ছোটখাট যেসব কাজ ছিল, সেগুলোও সম্পন্ন হয়েছে।
মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনসহ ছয়টি ভাগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের এমবিইসি।
আগামী শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আরও এক বছর। ২০২৩ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্প শেষ হবে। এই এক বছরকে লাইবেলিটি পিরিয়ড বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজের কোনো ত্রুটি থাকলে, তা নিজ দায়িত্বে ঠিকাদার মেরামত বা পুনঃনির্মাণ করে দেবে।
এর আগে মাওয়া অংশের সংযোগ সড়কের কাজ ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই, জাজিরা অংশের সংযোগ সড়কের কাজ ২০১৭ সালের ২ জুন, সার্ভিস এরিয়া দুইয়ের কাজ ২০১৬ সালের ১২ জুলাই সম্পন্ন হয়। ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার মূল সেতুর কাজ বুধবার সম্পন্ন হলো।
তবে নদী শাসনের এখনও বাকি প্রায় ৭ শতাংশ বাকি। আগামী বছরের ৩০ জুন এই কাজ শেষ হবে। প্রায় ৪ শতাংশ বাকি রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার কাজ।
পদ্মা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওএন্ডএম) কাজ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। এ কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে চীনের এমবিইসি এবং কোরিয়ার কেইসিকে। প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, ওএন্ডএমের কাজ পরিচালনায় প্রকল্প থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু হস্তান্তর করা হবে।
১৯৯৮ সালে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে শুরু হয় পদ্মা সেতুর বীজ বপন। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৯ সালে হয় সেতুর বিস্তারিত নকশা। তখন পরিকল্পনা ছিল ২০১৩ সালেই সেতু চালু হবে।
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঋণ পেতে ২০১১ সালের এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কিন্তু সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির কথিত অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংক সরে গেলে সহ-অর্থায়নকারী জাইকা, এডিবি ও আইডিবিও সরে যায়। দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের পর ২০১৫ সালে নিজস্ব অর্থায়নে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করবে।