এক হাজার মাদরাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে ১০০ ধর্ম ব্যবসায়ীর দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে গণকমিশন নামে একটি সংগঠন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছিল। গণকমিশনের সেই তালিকার সন্দেহভাজন ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
মঙ্গলবার (২১ জুন) কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও উপ-পরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড এবং তার শ্বেতপত্রের ভিত্তিতে অভিযোগটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এর আগে গত ১১ মে এক হাজার মাদরাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে ১০০ ধর্ম ব্যবসায়ীর দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছিল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয় গঠিত গণকমিশন।
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে এই শ্বেতপত্র ও ১০০ সন্দেহভাজন ধর্ম ব্যবসায়ীর ব্যক্তির তালিকা তুলে দেওয়া হয়। গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তালিকা জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছিলেন, আমরা ৯ মাস তদন্ত করেছি। বহু ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিয়েছি। ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গত মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তারা মানিলন্ডারিং করেছে। জামায়াত ও ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সেই দুর্নীতির তথ্য দিলাম। তাদেরকে বাড়তে দেওয়া যায় না।
দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরে সাবেক এই বিচারপতি আরও বলেছিলেন, দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন অর্ধশতাধিক ওয়াজ ব্যবসায়ীর দুর্নীতির খোঁজ শুরু করেছেন। আমাদের রিপোর্ট দুদক আইন মতে ব্যবস্থা নেবেন। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামনুল হকসহ যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
মানিক বলেন, আমাদের শ্বেতপত্র দুদকের কাজে আসবে। ডিসি, এসপি ও ইউএনওসহ যারা এই গোষ্ঠীদের উস্কানি দেয় তাদের নাম উল্লেখ করেছি। বিশেষ করে নোয়াখালীর এসপির বিরুদ্ধে বলেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
ওইদিন গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা এক হাজার মাদরাসার ও ওয়াজকারীদের ওপর তদন্ত করেছি, শ্বেতপত্রে বিস্তারিত আছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও হেফাজতের কর্মকাণ্ড উঠে এসেছে। তাদের অর্থনৈতিক জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এর কয়েকদিন পর গত ২৩ মে দুপুরে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ইসলামি কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশের নেতারা। যেখানে ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও তহবিলের উৎস, কমিটির নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং গণকমিশনের শ্বেতপত্রসহ অতীতে তাদের প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আর্থিক জোগান ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন তারা।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে ইসলামি কালচারাল ফোরামের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা নেয়। সরকারি অনুদান না নিয়ে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষিত জাতি গঠনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। অথচ আমাদের উৎসাহ না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা এসব হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাত ঘটাতে এসব কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। যারা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে, তাদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য আমরা দুদককে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি। স্মারকলিপি প্রদানে নেতৃত্ব দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।