দক্ষিণাঞ্চলের ১৪ নদীর পানি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদী

মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি নদীর পানি। এসব নদীর পানি পান করার কারণে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে, দূষণের বিরুদ্ধে আইনি প্রয়োগ না হওয়ায় নিঃশেষ হচ্ছে এ নদীগুলো। ফলশ্রুতিতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দূষিত নদীর পানি পান করে গবাদি পশুর মৃত্যুও হচ্ছে।

সম্প্রতি কোরিয়াভিত্তিক জার্নাল ‘হিলন’ এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ৪০ বছরের দূষণচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব মঞ্জুরুল কাদের গত মাসে খুলনা জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে খুলনার রূপসা, ভৈরব, ময়ূর, বিলডাকাতিয়া, পশুর, পটুয়াখালীর শিববাড়িয়া, বরগুনার খাকদোনা, ঝিনাইদহের কুমার, বরিশালের কীর্তনখোলা, শরীয়তপুরের পদ্মা, কুষ্টিয়ার মাথাভাঙ্গা, গড়াই, মধুমতী ও সাতক্ষীরার কাকশিয়ালি নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে শিল্প কলকারখানা। অধিকাংশ শিল্প কারখানা রাসায়নিক ও ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত অপরিশোধিত দূষিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। নদীগুলোতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, তেল, গ্রিজ, পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থলি বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা বিষাক্ত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরেও উল্লেখ করা হয়, দূষিত এসব নদীর পানি উদ্ভিদের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে নদীর পানি আলকাতরা সদৃশ আবার কোথাও পানি রং রংধনুর মতো হয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের জনগণ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। হারিয়ে যাচ্ছে জলজপ্রাণী, মত্স্য ও জীববৈচিত্র্য।

বাংলাদেশ আইনবিদ সমিতি বেলার পক্ষ থেকে আইনজীবী এস হাসানুল বান্না খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলেছেন, নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য আদালতের রায় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এতে নদী সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধি হবে। নৌযান চলাচল সহজ হবে। পরিবেশ দূষণ ও দখলকারীদের তালিকা তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্হা করতেও ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘নদী কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠান এবং দখলদার ব্যক্তিদের তালিকা নদী কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন