পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষ করে শিবচরের কাঁঠালবাড়ি জনসভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করি। তখন তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ নাকি কোনোদিন পদ্মা সেতু করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করি, আসুন দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।
আজ শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, অনেক জ্ঞানীগুণী লোক ছিলেন, যারা বলেছেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সমর্থন দিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে। জনগণের শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে সেই সেতু নির্মাণ করেছি। আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই বর্ষাকালে এ খরস্রোতা নদী পার হতে গিয়ে আর কারও সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোনকে হারাতে হবে না। নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাধা দিয়েছিল, তাদের একটা জবাব দিয়েছি। তাদের একটা উপযুক্ত জবাব এই পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দিতে পারলাম।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে চলে যেতে হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক, আমেরিকায় তদবির করে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিল। কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতু প্রাণের সেতু, যে সেতুর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। দুর্নীতি–ষড়যন্ত্রের কথা বলে টাকা বন্ধ করে দিল। টাকাটা বন্ধে করেছে, ঠিক আছে। বাংলাদেশ বসে থাকেনি।
আজকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ দিন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের টাকায় এই পদ্মা সেতুর তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলাম। অনেকে বলেছে, নিজের টাকায় সেতু করতে পারব না। আমার একমাত্র শক্তি বাংলার জনগণ। বাবা-মা, ভাই-বোন সব হারিয়ে, নিঃস্ব রিক্ত হয়ে ফিরে এসেছিলাম এই বাংলাদেশে।
শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।
গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দলে দলে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম; তা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই দেশ আমাদের। উন্নত–সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলব। বাবা-মা–ভাই সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি পেয়েছি বাবা-মা–ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের অধিকার, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত—এই ওয়াদা দিয়ে গেলাম।
এ সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ।