জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্যের সময়সীমা নিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিকে কম সময় দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হারুনের বক্তব্যের পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, হারুন স্পিকারকে ‘কটাক্ষ’ করেছেন। হারুন যখন কথা বলার জন্য ফ্লোর পাবেন, তখন তিনি তাঁকে কথা বলতে দেবেন না।
বুধবার সংসদের বৈঠকে অর্থ বিলের ওপর আলোচনার সময় তাঁদের মধ্যে এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
এর আগে জাতীয় সংসদে এক অধিবেশনে বিএনপির হারুনের বক্তব্যে নাখোশ হয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ রাঙ্গা বলেছিলেন, সংসদের লবিতে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি দায়ী থাকবেন না।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন তাঁর বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সময় না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, সরকারি দলের সদস্যদের অনির্ধারিত বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদেরকে সময় বাড়িয়ে দিতে আপনি ডিফেন্সিভ থাকেন। বিশেষ অধিকারের নোটিশে সময় বেঁধে দিয়েছেন দুই মিনিট। এটা অতীতে হয়নি।
হারুন বলেন, আমরা মাত্র কয়েকজন সদস্য। আমরা কথা বলতে গেলে এত যদি আপত্তি ও বাধা থাকে তাহলে বলেন, আমরা সংসদ ছেড়ে চলে যাই। সংসদে কথা বলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে।
তিনি অভিযোগ করেন, চলতি সংসদ অধিবেশনে বাজেটের ওপর আলোচনা কম হয়েছে। বাজেট নিয়ে খুবই কম কথা হয়েছে। পুরো কথা হয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে।
তাঁর এই অভিযোগ সম্পর্কে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, এক মিনিট কেন, আপনাকে চার মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। কথা বলার সময় তো খেয়াল থাকে না। আপনাদের প্রাপ্য সময়ের তুলনায় বেশি সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। আপনি যে কথাগুলো বলেছেন- সেটা ভেবে বলা প্রয়োজন।
পরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রাঙ্গা তাঁর বক্তব্যে স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একজন বিরোধী দলীয় সদস্য আপনাকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্য কোনো স্পিকার হলে তাঁর মাইক বন্ধ করে দিতেন। আমি এটা ২০০১ সালে দেখেছি। পদ্মা সেতু নিয়ে কেন তাদের এত গাত্রদাহ?
মসিউর রহমান রাঙ্গা এ সময় বলেন, আমরা বিরোধী দল থেকে চাইব, সরকারকে উৎখাত করতে। কিন্তু আল্লাহ না চাইলে কিভাবে উৎখাত করব। প্রধানমন্ত্রী এখন দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে এমন জনপ্রিয়তা তার বেড়েছে যাতে বিএনপির মতো জাতীয় পার্টিকে থালা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
এ সময় মাইক ছাড়াই হারুন টিপ্পনী কেটে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, এখন সময় বাড়িয়ে দেন। এর জবাবে রাঙ্গা হারুনকে বলেন, আপনাকে কি চিফ হুইপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি স্পিকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলছি, ওনি যখন কথা বলবেন আমি কিন্তু ওনাকে (হারুনকে) কথা বলতে দেব না।
পরে সংশোধনী আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে অনেক বিষয় এসেছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন দলকে বিরোধী দলে এনে বসিয়েছেন। আমি জীবনেও এ ধরনের আলোচনা শুনিনি। যে ধরনের হুমকিধামকি দেওয়া হচ্ছে.. আমি সত্যি আতিঙ্কত। এই সংসদে সাড়ে তিনশ সংসদ সদস্যের মধ্যে আমরা মাত্র কয়েকজন। এত যদি হুমকিধামকি দেন আমরা তো চ্যাপ্টা নয়, ভর্তা হয়ে যাবো। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের সুরক্ষা দেওয়া ব্যবস্থা করেন। বাইরের পারসেপশন, এটা এককেন্দ্রিক সংসদ হয়ে গেছে। এভাবে পার্লামেন্ট হয় না।