নির্বাচন নিয়ে সংসদে বিএনপি–আইনমন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনবে, সেটা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবশ্যই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আনতে হবে।

এই বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে উচ্চ আদালতের রায়ের এক সুতাও বাইরে যাবে না সরকার। তিনি প্রশ্ন করেন, বিএনপি কী পাকিস্তানে থাকে যে, সেখান থেকে ডেকে আনতে হবে?

universel cardiac hospital

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয়–সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় তাঁরা এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মঞ্জুরি দাবির আলোচনায় সংসদে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ একসময় বলেছিল, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? পারবেন না।

সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই নির্বচান সুষ্ঠু হবে না—মন্তব্য করে হারুনুর রশীদ বলেন, গত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে প্রশাসন। তাই তিনি এই বরাদ্দ নির্বাচন কমিশনকে না দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, যখন দেশে নির্বাচন থাকে, তখন নির্বাচন কমিশনের প্রশ্ন আসে। যদি নির্বাচন না থাকে, দিনের ভোট রাতে হয়, তখন নির্বাচন কমিশন দিয়ে কী হবে?

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খানের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে রুমিন বলেন, গোপন বুথে ডাকাত বড় চ্যালেঞ্জ। এই ডাকাত শুধু দলীয় ডাকাত নয়, পুলিশ প্রশাসনও এই ডাকাতি করে। এই ডাকাতির পর যেভাবে পুরস্কৃত করা হয়, ভবিষ্যতে ডাকাত আরও বাড়বে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, নির্বচান কমিশন যত শক্তিশালী হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তত যৌক্তিকতা হারাবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনী পুলিশ গঠনের প্রস্তাব করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ইভিএমের কোনো দোষ নেই। যারা ইভিএমে প্রভাব খাটায়, ব্যালটেও তারা প্রভাব খাটাতে পারে। এ বিষয়টি বন্ধ করতে হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তারা যদি সুষ্ঠু পরিবেশ করে দিতে না পারে, তাহলে নির্বাচন কমিশন ঢাকায় বসে কিছুই করতে পারবে না। আসলে নির্বাচন কমিশনসহ কোনো কমিশনই স্বাধীন নয়। সব সরকারের আমলেই এটি হয়েছে, এটি চলতেই থাকবে। তিনি বলেন, সবাই নির্বাচনে জিততে চায়। এখানে কোনো এথিকস মানে না। যেদিকে শক্তি বেশি থাকে, স্থানীয় প্রশাসনও সেদিকে চলে যায়।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, চারটি দল শুধু ইভিএমের পক্ষে আর বেশিরভাগই বিপক্ষে। আজ্ঞাবহ না হয়ে নির্বাচন কমিশনকে জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইভিএম বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএনপির সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই সংসদে দাঁড়িয় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ, বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বারবার বলছে, তাদেরকে নির্বাচনে আনতে হবে। তারা কী পাকিস্তানে থাকে যে সেখান থেকে ডেকে আনতে হবে? তারা তো বাংলাদেশে থাকে। বাংলাদেশে হয় নির্বাচন। উনারা নির্বাচন করতে চাইলেই নির্বাচন করতে পারে।

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের যে জন্য প্লেয়িং ফিল্ড দরকার, সেটা করা হবে। এর পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। সেটা করা হয়েছে।

বিএনপির আমলের বিভিন্ন নির্বাচনের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, বিশ্বের কোথাও বোধ হয় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয় না। কারণ, মানুষমাত্রই ভুল হয়। যার কারণে হয়তো আধা শতাংশ, ১ শতাংশ ভুল থাকে।

শেয়ার করুন