প্রসঙ্গ : বাজেট ২০২২-২৩

সম্পাদকীয়

বাজেট ২০২২-২৩
বাজেট ২০২২-২৩। প্রতীকী ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে যে ৩টি বাজেট ঘোষণা করেছেন, তার দুটিই ছিল করোনাকালীন। এবার মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলেও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ মারাত্মক সংকটে ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিকে, যার অভিঘাত পড়েছে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের তকমা পাওয়া বাংলাদেশেও। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা গিয়েছিল, বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ ও বাংলাদেশের ৫১তম বাজেটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছরের ৬টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখও করেছেন।

এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো, বিদেশি সহায়তা বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা, মূল্য সংযোজন করের পরিমাণ ও ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখা।

আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রী সমস্যাগুলো ঠিকঠাকভাবে চিহ্নিত করতে পারলেও এর সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেননি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা যথার্থ নয়। ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। অনেক পরিবার তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে এনেছে।

যারা ব্যয় কমায়নি, মূল্যস্ফীতির কারণে তারাও আগের সেবা পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদেরা নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সহায়তায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছিলেন। বাজেটে ব্যবসায়ী শ্রেণির জন্য আর্থিক প্রণোদনা থাকলেও এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো প্রণোদনা নেই।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়াতে অর্থমন্ত্রী বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ কর ধার্য করেছেন। যাঁরা দেশ থেকে নানা অপকৌশলে অর্থ পাচার করেছেন, তাঁরা এই করসুবিধা নিয়ে সুবোধ বালকের মতো দেশে অর্থ ফিরিয়ে আনবেন, এমন আশা করা দুরাশা কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তদুপরি নৈতিকতার প্রশ্নও আছে। এর মাধ্যমে যাঁরা পাচার করেননি, পরোক্ষভাবে তাঁদের ‘শাস্তি’ দেওয়া হলো। এর আগে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে এবং তা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

বস্তুত এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য খুব বেশি সুখবর নেই। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। কমানো হয়েছে রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের সীমা। দুর্দিনের ভরসায় ও আয়কর কিছু ছাড় পেতে মধ্যবিত্ত সঞ্চয় করে থাকে। এক্ষেত্রে মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ কর রেয়াতযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করা হতো, এবার তা করা হয়েছে ২০ শতাংশ। এতে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ আরোপ করায় বাড়বে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ। এসব ছাড়াও বাজেটে ভ্যাট ও শুল্ক-কর খাতে এমন অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে।

এছাড়া প্রতিবছরের ন্যায় এবারের বাজেটেও মানবসম্পদ উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অবহেলিত থেকে গেছে, যা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

শেয়ার করুন