সিলেটে বন্যাকবলিত হয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৩টি উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছিল। জেলার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছিল। জেলায় চলমান বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন ছাড়া ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে বন্যা–পরবর্তী পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে চলমান বন্যার বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক।
মজিবর রহমান বলেন, বন্যায় জমির ফসল ও ঘরে সংরক্ষিত খাদ্যশস্য নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখনো জেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে আছে।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত পুরো জেলায় প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত টাকা প্রায় পৌনে তিন কোটি, বাকি টাকা বেসরকারিভাবে পাওয়া গেছে। বন্যা চলমান থাকায় বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরও ৭০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ১৪ জুন শুরু হয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এখনো চলছে। বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ৬৫ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে বেসরকারিভাবে পাওয়া ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ টাকার মধ্যে ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে আরও জানানো হয়, বন্যার প্রথম পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সিলেট সিটি করপোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং বোতলজাত পানি বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৭টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ৮টি উপজেলায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর ও ওসমানীনগর উপজেলায় এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৫৫৬ টি নলকূপ জীবাণুমুক্তকরণ, ২৩০টি নলকূপ মেরামত এবং ৩১৮টি নলকূপ উঁচু করা হয়েছে।
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে ৩ লাখ ৮০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ১৪০টি মেডিকেল দল কাজ করছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।