হাওরাঞ্চলে পানি কমলেও বাড়ি ফেরা হচ্ছে না বানভাসিদের

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা হাওরাঞ্চলে পানি কমলেও বাড়ি ফেরা হচ্ছে না বানভাসি অনেক মানুষের। ঢেউ ভাঙছে বসতভিটা ও মাটি। হাওর পাড়ের ফসল হারা ও খেটে খাওয়া মানুষ দুদফা বন্যার তাণ্ডবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, বৈশাখের শুরুতেই দিরাই উপজেলার হুরা মন্দিরা ও চাপতির হাওর এবং শাল্লার ছায়ার হাওর আগাম বন্যায় তলিয়ে যায়। এবার প্রলয়ংকারী বন্যায় বড় বড় ঢেউয়ে হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আফালের কারণে ঘরের বেড়া ভেঙে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে বসতভিটা মাটি।

universel cardiac hospital

শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের ছায়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সুর্যকান্ত রায় বলেন, আগাম বন্যায় নিল ফসল, এবার বন্যায় ঘরবাড়ি এর পর আফালে (ঢেউ) যেটুকু আছিল এইটুকুও তছনছ করে দিয়ে গেছে।

দিরাই উপজেলার মাটিয়াপুর গ্রামের ফজর আলী, চাপতির হাওর পাড়ের বাসিন্দা। বানের পানিতে বাড়ি, আফালে বসতভিটা মাটি সব নিয়ে গেছে কৃষক ফজর আলীর।

চান্দপুর গ্রামের রতিকান্ত দাস, নন্দকুমার দাস ও নিতেশ বর্মনসহ অনেকেরই বাড়ি ফেরা হয়নি, বানের পানি ও আফালে সব নিয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন তারা।

দুবেলা খাবার জুটলেও বসত-ভিটা ও মাথাগুজার ঠাঁই কাচা ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না হাওর জনপদের বানভাসি মানুষের। বানের পানি বাউলশিল্পী আশিক সরকারকে ঘরছাড়া করছে, আফাল ভাংছে বসতভিটার মাট, গ্রামের দালানের ছাদে তাবু বানিয়ে কোনমতে বাস করছেন তিনি, পানি কমলেও মাথাগুজার একমাত্র ঠাই বসত ভিটা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না তার।

উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনারায়ণপুর গ্রামের উদীয়মান এই শিল্পীর গানের জিনিসগুলো ভেসে গেছে তোড়ে। এই বাউল শিল্পী জানান, বাস পালা দিয়া বানাইছয়াল নয়া বাড়ি, আমার এক লক্ষ টাকা দামের একটা লন্ডনী বায়লিন বেহালা, আর একটা হাড়মুনিয়াম, আর বিয়ের মাল পত্রসহ অনেক ক্ষতি অইছে ভাই, আমি অন্য এক বাড়ির ছাদের উপরে তাবু বাইন্দা থাকরাম, আফালে ঘরের বেড়া একটা ও নাই ,আর শুধু চাল টা আছে,তা ও এক হাত দাবি গেছে ঘর।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, পানি কমলেও অনেক বানভাসি মানুষের ঘরে ফেরা হয়নি, ঢেউয়ে অনেক বসতভিটা মাটি ক্ষতি হয়েছে। শাল্লায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৯৩০ এবং সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৬৩০, তবে ক্ষতির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় জানান, এবারের বন্যায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় সাংসদ ড. জয়া সেন গুপ্তা জানান, সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সবধরনের সহায়তা প্রদান করবে, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন