জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নির্বাচনের ইতিহাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তাঁর সরকার জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ শুধুু স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকারই প্রয়োগ করেনি, নির্বাচনটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে।

জনসাধারণ যাতে তাদের ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিহিত। প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার কুসিকের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

প্রধানমন্ত্রী গণভবণ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তিনি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে এবং তাদের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার জন্য কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিশ্বাস নিয়ে আপনাদেরকে ভোট দিয়েছে, সেই বিশ্বাসে যেন কখনো চিড় না ধরে, সেই বিশ্বাস যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেই বিশ্বাসকে ধরে রেখে আরো বিশ্বাস যাতে অর্জন করতে পারেন, সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিজয়ী আরফানুল হত রিফাতকে ভার্চুয়ালি শপথ বাক্য পাঠ করান।

সংরক্ষিত আসনের নয়জন মহিলাসহ ৩৬ জন নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ মূলত প্রযুক্তিনির্ভর এবং বেশিরভাগ দেশই তাদের নির্বাচনে প্রযুক্তি ও নির্বাচনী ভোটিং মেশিন ব্যবহার করছে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণ যেন তাদের ভোটের অধিকার উপভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে যা যা করার দরকার, আওয়ামী লীগ সরকার করে যাচ্ছে। কেননা, আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে এবং দলটির প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

তিনি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রতিস্থাপন, ছবিসহ নির্বাচনী ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ভোটার তালিকা থেকে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে নির্বাচন ব্যাবস্থাকে স্বচ্ছ ও যুগোপযোগীকরণে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় মহাজোটের অবদানের কথার স্মরণ করেন।

’৭৫ পরবর্তী সময়ের সামরিক সরকারের অধীনে এ দেশে সংঘটিত নির্বাচনের নামে প্রহসন এবং জিয়াউর রহমানের বিতর্কিত, ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনসহ খালেদা জিয়ার ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার বিহীন নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ।

দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে জানিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রায় ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হয় বলেও জানান সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতোপূর্বে তাঁর সরকার কুমিল্লার টেকসই উন্নয়নে ১ হাজার ৫শ’ ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যদিও সে সময় কুমিল্লার মেয়র অন্য দলের ছিলেন।

কুমিল্লা নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে তিনি নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি-পেট্রোল ও ডিজেল-এবং বিদ্যুতসহ দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জনগণকে পরামর্শ দেন। তিনি জনগণকে আরও ফসল ফলানোর জন্য এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই, বাংলাদেশ সব সময় এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায়ই গড়ে উঠবে। সব ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকবে। কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত দেবে না বা ধর্ম পালনে বাঁধা-নিষেধ দেবে না।

শেয়ার করুন