৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বাণিজ্য ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই
ফাইল ছবি

রপ্তানি আয়ে বড় প্রবৃদ্ধির পরও বহির্বিশ্বের সঙ্গে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবেও বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর পরিমাণ ১৭ বিলিয়ন ডলারেও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অস্বাভাবিক হারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বড় বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। আর অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবাসী আয়ের পতনের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে। যদিও বাংলাদেশ বরাবরই বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। কারণ রপ্তানির স্বার্থেই আমাদের দেশে আমদানির প্রয়োজনীয়তা বেশি।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। অন্যদিকে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৯৩.৪৫ টাকা) দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ডলার। আর অর্থবছরের পুরো সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমকি ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। আলোচিত ১১ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ৪৫৮ কোটি ডলার। এ সময় পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১ কোটি ডলার।

এ সময়ে সেবাখাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সেবাখাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮২ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবাখাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ কোটি ডলার। সেবাখাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৫৩ কোটি ডলার।

চলতি হিসাবে ভারসাম্যেও বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের ১১ মাসে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৮৫২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময় এসেছিল দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

শেয়ার করুন