এবারের উইন্ডিজ সফরে যেন জিততেই ভুলে গেছে বাংলাদেশ দল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ০-২ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আবার হারের স্বাদ পায় টাইগাররা। তিন ম্যাচের কুড়ি ওভারের সিরিজে শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার বোলারদের ব্যর্থতায় ৫ উইকেটে হেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এতে টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজটিও খোয়াল সফরকারীরা।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে আফিফ হোসেনের ফিফটি আর লিটন দাসের ৪৯ রানের সুবাদে স্কোর বোর্ডে ১৬৩ রান তোলে বাংলাদেশ দল। ১৬৪ রানে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে টাইগার বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফায়দা তুলেছে স্বাগতিকরা। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ফিফটির দেখা পেয়েছেন কাইল মায়ার্স আর অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। এতে ৫ উইকেট আর ১০ বল হাতে রেখেই জয় পায় উইন্ডিজ। ফলে এবারের ক্যারিবীয় সফরে এখনো জয়-বঞ্চিত বাংলাদেশ দল।
অথচ বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু পায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পেয়ে ইনিংসের প্রথম ওভার করতে এসেই দলকে সফলতা এনে দেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি স্পিনারের করা ওভারের শেষ বলটি মিড অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং, কিন্তু ধরা পড়ে যান মাহমুদউল্লাহর হাতে। ৫ বলে ৭ রান করে ফেরেন কিং। এরপর আরেক স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানও উইকেটের দেখা পান। ফেরান তিনে নামা শামার ব্রুকসকে।
মেহেদির বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন ব্রুকস। বল চলে যায় স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো এনামুল হকের হাতে। ১২ বলে ১২ রান করেন ব্রুকস। এতে ২ উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪৩ রান তোলে উইন্ডিজ। সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মতো হাত ঘোরাতে এসে সফল হন সাকিব আল হাসান। এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন ওডিন স্মিথকে। সাকিবকে সুইপ করতে চেয়েছিলেন স্মিথ। বল ব্যাট মিস করে লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ৪ বলে ২ রান করেন স্মিথ।
এরপর মায়ার্স আর পুরানের দারুণ জুটিতে পথ হারিয়ে বসে সফরকারী বোলাররা। মূলত পেস অ্যাটাক নিয়ে আসার পরেই ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। একের পর এক আলগা বলে দুই ব্যাটসম্যান সেট হওয়ার সুযোগ করে দেন মুস্তাফিজুর রহমান আর শরিফুল ইসলাম। নাসুম আর মোসাদ্দেকও পরে খেই হারান মায়ার্স-পুরানের সামনে। টাইগার বোলারদের শাসন করে চতুর্থ উইকেটে জুটিতে ৫১ বলে ৮৫ রান যোগ করেন এই দুইজন।
৩২ বলে ফিফটির দেখা পান মায়ার্স। যদিও এরপর বেশিদূর আগাতে পারেননি তিনি। ৫ রান যোগ করে ফেরেন নাসুমের শিকার হয়ে। ৩৮ বলে ২টি চার আর ৫টি ছয়ের মারে ৫৫ রান করেন মায়ার্স। এরপর শুরু হয় পুরান ঝড়। ৩১ বলে ফিফটির দেখা পান ক্যারিবীয় অধিনায়ক। মাঝে রভম্যান পাওয়েলকে আফফ হোসেন ফেরালেও জয় পেতে বেগ পেতে হয়নি উইন্ডিজকে।
পুরানের ৩৯ বলে হার না মানা ৭৪ রানের ইনিংসে ১০ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় উইন্ডিজ। সঙ্গে ২-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দলকে ভালো শুরু এনে দেন ওপেনার লিটন দাস। তবে এদিনও সুবিধা করতে পারেননি আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ওডিন স্মিথকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে থার্ডম্যান অঞ্চলে আকিলের হাতে ধরা পড়ে ফেরেন ১১ বলে ১০ রান করে। সাকিব আল হাসানও রানের দেখা পাননি। নিজের খেলা তৃতীয় বলে আউট হন স্মিথের দারুণ এক ক্যাচে। সাকুল্য ৫ রান করে ফেরেন সাকিব।
৪২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ছুটেছিলেন অর্ধশতকের দিকে। তবে ১ রানের আক্ষেপে পুড়ে আউট হন ৪৯ রানে। ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪১ বলে এই রান করেন লিটন। ভাঙে আফিফের সঙ্গে গড়া ৫৭ রানের পার্টনারশিপ। পার্টনারকে হারিয়ে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আফিফ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে নতুন জুটি গড়ে হাত খুলে ব্যাট চালিয়ে খেলেন এই তরুণ। তাতে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে যান তিনি।
৩৮ বলে অর্ধশতকের স্বাদ পান আফিফ। ৪৯ থেকে দৌড়ে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন। এতে সমান ৫০ রানে সাজঘরে ফেরেন ২টি করে চার আর ছয় মেরে। তার ঠিক ২ বল আগে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের ১৯তম ওভারে হেইডেন ওয়ালশকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে লেগবিফোরের ফাদে পড়েন তিনি। ২০ বলে ২২ রান আসে অধিনায়কের ব্যাট থেকে।
শেষদিকে নুরুল হাসান সোহানের ২ এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ৬ বলে ১০ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। ক্যারিবীয়দের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন স্পিনার হেইডেন ওয়ালশ।