শ্রীলঙ্কায় সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐক্যমত্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে শ্রীলঙ্কায় একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে বিরোধী দলগুলো। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের ঘোষণার পর রোববার (১০ জুলাই) এক বৈঠকে ওই ঐক্যমত্যে পৌঁছান নেতারা। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটিতে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করায় গণঅভ্যুত্থানের মুখে শনিবার (৯ জুলাই) পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। এরপর নতুন সরকার গঠনে কাজ শুরু করে বিরোধী দলগুলো।

খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন রোববার (১০ জুলাই) একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে বৈঠকে বসেন বিরোধী নেতারা। এতে ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা পার্টির (এসএলপিপি) বিদ্রোহী অংশের নেতারাও অংশ নেন। বৈঠকে তারা নতুন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার বিভিন্ন উপায় নিয়েও কথা বলেন।

বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন এসএলপিপির সংস্কারপন্থী নেতা বিমল বীরাওয়ানসা বলেন, ‘আমরা সবগুলো দল নিয়ে একটা সর্বদলীয় ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। এটা এমন একটা সরকার হবে যেখানে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’

শিগগিরই সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়ে এসএলপিপির আরেক সংস্কারপন্থী নেতা বাসুদেভা নানাইয়াক্কারা বলেন, সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের জন্য ১৩ ‍জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তার আগেই সরকার গঠন করা হবে।

গোতাবায়া শনিবার (৯ জুলাই) পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনাকে জানিয়ে দেন, আগামী বুধবার (১৩ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন তিনি।

এদিকে প্রধান বিরোধী দল সঙ্গী জানা বালাওয়েগায়া পার্টি (এসজেবি) জানিয়েছে, সরকার গঠন বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসজেবির সাধারণ সম্পাদক রনজিথ মাদ্দুমা বানদারা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সব দলের অংশগ্রহণে একটা ঐক্যমত্যের সরকার গঠন। এরপরই আমরা সংসদ নির্বাচনে যেতে চাই।’

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ের পদত্যাগের পর শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, পার্লামেন্ট স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ার্দেনা ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সে ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

কয়েক মাসের বিক্ষোভ আর বিশৃঙ্খলার পর শ্রীলঙ্কার রাজপথ এখন অপেক্ষাকৃত শান্ত। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পলায়ন আর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারের পতনে দেশজুড়ে চলছে আনন্দ-উল্লাস। এখন নতুন একটি সরকারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জনগণ। তাদের প্রত্যাশা- জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক নতুন সরকারের হাত ধরে দেশে সত্যিকার পরিবর্তন আসবে।

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় গত কয়েকমাস ধরেই বিক্ষোভ চলছে। দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য রাজাপাকসে সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করে জনগণ। আর এজন্য সরকার পতনের দাবিতে গত মার্চ মাসে বিক্ষোভ শুরু হয়।

মে মাসের শুরুর দিকে আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। সংকট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়নি। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।

শনিবার (৯ জুলাই) রাজধানী কলম্বোতে গণবিক্ষোভের ডাক দেয়া হয় এবং সারা দেশের মানুষকে সেই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার বিকাল থেকেই কলম্বোজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। এরপরও গণমানুষের স্রোত থামানো যায়নি।

এদিন (৯ জুলাই) সকালেই রাজধানী কলম্বোয় জড়ো হয় লাখো বিক্ষুব্ধ জনতা। একজোট হয়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে প্রথমে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। অবশ্য বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের আগেই উভয় নেতাকেই তাদের বাসভবন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।

বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে শনিবার দুপুরেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। এরপর সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন মাত্র দুই মাস আগে দায়িত্ব নেয়া প্রবীণ এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, নতুন সর্বদলীয় একটি সরকার গঠনের পথ করে দিতে পদত্যাগ করছেন তিনি। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগ দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়নি। বরং তার বাসভবন দখল করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে রাতে দেশটির স্পিকার জানান, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া গদি ছাড়তে রাজি হয়েছেন এবং আগামী ১৩ জুলাই তিনি পদত্যাগ করবেন।

তবে বিক্ষোভকারীরা এখনও পুরোপুরি আস্বস্ত হতে পারছে না। তারা বলছে, প্রেসিডেন্ট গদি না ছাড়া পর্যন্ত সরকারি বাসভবন ছাড়বে না। বিক্ষোভকারীদের একাংশের নেতা রুয়ান্থি ডি চিকারা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে হবে ও এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে।’

প্রেসিডেন্টের বাসভবনে অবস্থান নেয়া কে চন্দ্রা নামে এক বিক্ষোভকারী আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের এভাবে বেঁচে থাকার কথা নয়। দেশের যে বাজে অবস্থা এর জন্য নেতারাই দায়ী।’

শেয়ার করুন