সিরিজ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১০৯ রান

ক্রীড়া ডেস্ক

মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না ক্যারিবীয়রা। ৩৫ ওভার খেলে ১০৮ রানেই গুটিয়ে গেলো স্বাগতিকরা। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিতে বাংলাদেশের প্রয়োজন মাত্র ১০৯ রান।

গায়ানায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও টস জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো এবারও আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় টাইগাররা। একাদশে তাসকিন আহমেদের জায়গায় নেওয়া হয় মোসাদ্দেক হোসেনকে।

universel cardiac hospital

ফিল্ডিংয়ে নেমে মোসাদ্দেকের হাতেই তুলে দেওয়া হয় প্রথম ওভারের দায়িত্ব। তবে দুই ওভারের সংক্ষিপ্ত স্পেলে তেমন কিছু করতে পারেননি এ ডানহাতি অফস্পিনার। অপরপ্রান্তে মোস্তাফিজুর রহমানও উইকেটের দেখা পাননি।

আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে রয়েসয়ে খেলছিলেন মায়ার্স ও হোপ। কিন্তু পঞ্চম ওভারে মেহেদি মিরাজ আক্রমণে আসতেই তেড়েফুঁড়ে মারতে যান হোপ। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারেননি।

মিরাজের ঝুলিয়ে দেওয়া আর্ম বলে এগিয়ে মারতে গিয়েছিলেন হোপ। বল তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। কিন্তু সেটি গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি সোহান। ফলে হাতছাড়া হয় প্রথম সুযোগ।

একই বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া হোপকে স্টাম্পিং করতে পারতেন সোহান। কিন্তু বলের বদলে তার হাত লেগেই ভেঙে যায় স্টাম্প। ফলে একই বলে দুই আউট থেকে বেঁচে যান হোপ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে হোপের অতীত পরিসংখ্যান উজ্জ্বল। আজকের আগে ওয়ানডেতে টাইগারদের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে প্রায় ৮৫ গড়ে ৭৬০ রান করেছেন হোপ।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই হোপকে সাজঘরে প্রায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। তার ওভারের প্রথম পাঁচ বলে রান নিতে পারেননি হোপ। শেষ বলটি হালকা ঝুলিয়ে অফস্টাম্পের ওপর করেন নাসুম।

রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়েও ব্যাটে লাগাতে পারেননি হোপ, বল চলে যায় সোহানের গ্লাভসে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তবে তাৎক্ষণিকভাবে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান হোপ। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান করতে সক্ষম হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

প্রথম স্পেলে দুই ওভার করার পর ১১তম ওভারে ফের আক্রমণে আনা হয় মোসাদ্দেককে। তার দারুণ এক অফস্পিনেই সরাসরি বোল্ড হন মায়ার্স। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ভোগানো মায়ার্স ৩৬ বলে ১৭ রান করে আউট হন।

প্রথম ওয়ানডেতে নিজের অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন নাসুম। কিন্তু ৮ ওভারে তিন মেইডেনসহ মাত্র ১৬ রান দিলেও কোনো উইকেটের দেখা পাননি তিনি। উইকেটের এই অপেক্ষা বেশি দীর্ঘায়িত করেননি ২৭ বছর বয়সী এ স্পিনার।

মায়ার্সের পর ব্রুকসকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি নাসুম। নিজের প্রথম তিন ওভারে দুইটি মেইডেন করা নাসুম চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে হজম করেন বাউন্ডারি। ঘুরে দাঁড়াতে মাত্র এক বল লাগে তার। সেই ওভারের পঞ্চম বলেই নাসুমের আর্মারের জবাব খুঁজে পাননি ব্রুকস।

নিজের পরের ওভারটি মেইডেন করেন নাসুম। এরপর ব্যক্তিগত ষষ্ঠ ও ইনিংসের ১৭তম ওভারেই দেখান জোড়া ভেলকি। ওভারের চতুর্থ বলে হাঁটু গেড়ে সুইপ করেছিলেন শুরু থেকে রক্ষণাত্মক খেলতে থাকা হোপ। কিন্তু গতির তারতম্যের কারণে বল লাগে হোপের ব্যাটের ওপরের কানায়।

আকাশে উঠে যাওয়া বলটি শর্ট মিড উইকেট থেকে খানিক পেছনে দৌড়ে দারুণভাবে তালুবন্দী করেন মোসাদ্দেক। এক বল পর সাজঘরের পথ ধরেন পুরান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।

সেই উইকেট পতনের মিছিল আর থামেনি স্বাগতিকদের। ২৬তম ওভারে এসে ৬৯ রান তুলতেই তারা হারিয়েছে পঞ্চম উইকেট। এবার আঘাত শরিফুল ইসলামের। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই রভম্যান পাওয়েলকে তুলে নেন বাঁহাতি এই পেসার।

শরিফুলের স্টাম্পে করা ব্যাক অফ দ্য লেন্থ ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে আকাশে বল ভাসিয়ে দেন পাওয়েল (১৩), শর্ট মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

পরের ওভারে এসে টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টাইগার অফস্পিনারকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে পরিষ্কার বোল্ড ব্রেন্ডন কিং (১১)। পরের বলে রানআউটের কবলে আকিল হোসেন (২)। ৭২ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।

এরপর লেজটা ছেঁটে দিতে সময় লাগতো না। ৩১তম ওভারে আবারও জোড়া উইকেট শিকার করেন মিরাজ। ৮৬ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে ক্যারিবীয়রা।

কিন্তু কেমো পল দারুণ খেলে একশ পার করে দেন স্বাগতিকদের। দশম উইকেট গুদাকেশ মোতির সঙ্গে ২৬ বলে ২২ রানের জুটি গড়েন এই লোয়ার অর্ডার। শেষ পর্যন্ত মিরাজ এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোতিকে (৬)। পল ২৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

মিরাজই শেষ পর্যন্ত সফলতম বোলার। ৮ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। ১০ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা নাসুম। শরিফুল আর মোসাদ্দেক নেন একটি করে উইকেট।

শেয়ার করুন