সড়কে একদিনে ঝরল ১২ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক দুর্ঘটনা
প্রতীকী ছবি

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে কর্মদিবসের দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে পৃথক ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১২ জন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১০ জন।

এর মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ মারা গেছেন ৬ জন। আর মোট দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জনের মধ্যে নারী তিনজন এবং পুরুষ ৯ জন।

universel cardiac hospital

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, রাজধানীর কাকলি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে একজন, মাদারীপুরের রাজৈরে পিকআপ ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন, দিনাজপুরে প্রাইভেটকার উল্টে তিনজন, লক্ষ্মীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে দ্রুতগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় একজন, মানিকগঞ্জের তরা সেতুর ওপর সেলফি পরিবহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুজন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন এবং ময়মনসিংহ মোটরসাইকেলের পেছন থেকে পড়ে গিয়ে একজন মারা গেছেন।

রাজধানীর কাকলি

বুধবার (১৩ জুলাই) সকাল সোয়া ছয়টার দিকে রাজধানীর কাকলি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত রঞ্জু শেখের (৩৫) বাড়ি রাজবাড়ীতে। তিনি ঢাকায় একটি ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া জানান, নিহত রঞ্জু শেখ পথচারী ছিলেন নাকি বাসের যাত্রী ছিলেন তা নিশ্চিত হতে চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছেন। বাসটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন তা জানা সম্ভব হয়নি বলে জানান ওসি।

ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, যতটুক শুনেছি বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। হয়তো হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে উল্টে যায়।

মাদারীপুরের রাজৈর

বুধবার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার আলমদস্তা নামক স্থানে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মাদারীপুরগামী আমবোঝাই একটি পিকআপ ও সোনারবাংলা নামে টেকেরহাটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।

এ সময় ঘটনাস্থলে পিকআপচালক সাদ্দাম নিহত হন। গুরুতর আহত আম ব্যবসায়ী খায়রুল ও মহাব্বত আলীকে (১৮) রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে খায়রুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার এসআই রুহুল আমিন জানান, লাশ দুটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর

বুধবার সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের চরচামিতা বাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে দ্রুতগামী একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দিলে একজন মারা যান। এ সময় আরও ছয় বাসযাত্রী আহত হন। নিহত ব্যক্তি ট্রাকচালকের সহকারী (হেলপার) বলে জানা গেছে। তার নাম মমিন উল্লাহ (৩২)।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রী নিয়ে ইকোনো পরিবহনের একটি বাস লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চরচামিতা এলাকায় পৌঁছালে বাসটি একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গাড়ির সামনের দিকে থাকা ছয় যাত্রী আহত হন। ঘটনাস্থলেই ট্রাকচালকের সহকারী নিহত হন।

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। যাত্রীবাহী বাসটি জব্দ করা সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড

বুধবার ভোর ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট জলিল স্টেশনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন।

বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমীর উদ্দিন বলেন, ঢাকা থেকে আসা ১০টি মোটরসাইকেলের একটি গ্রুপ বিলাইছড়ি যাচ্ছিল। ভোর ৬টার দিকে ফৌজদারহাট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

তিনি আরও জানান, মোটরসাইকেলটি রাস্তা পার হওয়ার সময় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।

এ ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ও তার স্ত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। মোটরসাইকেল আরোহী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ শহরের বাসা থেকে সুনামগঞ্জে যাবার পথে নেত্রকোনার মুক্তারপাড়া মাঠের কাছে এক দুর্ঘটনায় মারা যান সিনিয়র স্টাফ নার্স ইসপাত জাহান মিতু (২৮)। বুধবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মিতুর স্বামী জাকির হোসেন জানান, ময়মনসিংহ থেকে তিনি সস্ত্রীক মোটরসাইকেলে করে মোহনগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে নেত্রকোনার মুক্তারপাড়ার কাছে পেছনে বসা তার স্ত্রী নার্স মিতুর পাশে থাকা ব্যাগ পড়ে যাবার সময় তা ধরতে গিয়ে চলন্ত অবস্থায় পড়ে যান তিনি। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মিতু মারা যান।

দিনাজপুর

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দিনাজপুর-দশমাইল মহাসড়কের ৭ মাইল নশিপুর এলাকায় মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে প্রাইভেটকার উল্টে তিন যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- দিনাজপুর শহরের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বালু মহাল ইজারাদার সুইহারী আশ্রম পাড়া এলাকার কপিল বসাকের ছেলে বর্ণ বসাক (১৮)। মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত নুরুল আমিন সিদ্দিকীর ছেলে ইমন (২২) এবং কসবা এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার শাওন (২৩)।

এদের মধ্যে ইমন রাজধানী ঢাকার সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং শাওন সৈয়দপুর ক্যান্টন্মেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

এছাড়াও আহতদের মধ্যে তামজিদ ও রওনাককে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পাঁচ তরুণ ১৪০ কিলো স্পিডে প্রাইভেট কার রাইট করার সময় বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা সেতুর ওপর সেলফি পরিবহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কলেজছাত্রসহ দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন সেলফি পরিবহনের বাস ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেন। নিহতরা হলেন মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জুয়েল মিয়া (২৫) এবং তার বন্ধু ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান (২৫)। এ ঘটনায় আহত তাদের বন্ধু হাসিবুর রহমান মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

নিহত দুজনের বাড়ি জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে মানিকগঞ্জের তরা সেতুর ওপর পাটুরিয়াগামী সেলফি পরিবহনের বাসটি পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান কলেজছাত্র জুয়েল মিয়া এবং তার বন্ধু আশিকুর রহমান। এ ঘটনায় আহত হন আরেক বন্ধু হাসিবুর।

এদিকে দুর্ঘটনার পর পরই স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে সেলফি পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেছে। এ সময় পুলিশ লাঠি চার্জ করে উত্তেজিত জনতাকে মহাসড়ক অবরোধ করা থেকে বিরত রাখে। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে সেলফি পরিবহনের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।

শেয়ার করুন