পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে অফিস-আদালত, কল-কারখানা বন্ধ থাকায় কমে গিয়েছিল বিদ্যুতের চাহিদা। তাই এই সময়টায় লোড শেডিংয়ের ভোগান্তি ছিলই না বলা যায়। তবে ছুটি শেষে গতকাল মঙ্গলবার থেকে অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা খুলতে শুরু করেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তে শুরু করেছে লোডশেডিংও।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটির আগে দেশে বিদ্যুতের দৈনিক গড় চাহিদা ছিল সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সেখানে বিপিডিবি সরবরাহ করতে পারত গড়ে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। তাই রাজধানীসহ পুরো দেশেই লোডশেডিং ছিল। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই আবারও সেই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা হান্নান আহমেদ বলেন, ‘এবার ঈদ উদযাপনে লোডশেডিং নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কারণ ঈদের দুই-তিন দিন আগেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকত না এই এলাকায়। কিন্তু ঈদের আগের দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ছিল। তবে গতকাল লোডশেডিং বেশি মানে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনবার লোডশেডিং হয়েছে।’
বিপিডিবির পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছুটিতে অফিস-আদালত ও শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম ছিল। তাই লোডশেডিং দিতে হয়নি। গতকাল থেকে অফিস-আদালত চালু হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের চাহিদা ছিল। পর্যাপ্ত গ্যাস থাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের সক্ষমতা ছিল প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে শিল্প-কারখানাগুলো পুরোপুরিভাবে চালু হলে তখন আবার গ্যাসের সংকট দেখা দেবে। তখন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। ’
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে দুই হাজার ৪৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকিটুকু সরবরাহ করা হয়েছে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাস থেকে।
ঈদের ছুটির আগে থেকে সারা দেশেই লোডশেডিং হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) কিনতে প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) খরচ হয়েছিল প্রায় ২৫ ডলার। সেটি এখন প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণেই সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। এখন চুক্তিভিত্তিক এলএনজি এবং দেশীয় গ্যাস থেকেই চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে গ্যাসসংকটে বেশ কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকে।
চলমান পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময় মেনে লোড শেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করার কাজ শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ খাতের চলমান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংকট মোকাবেলায় সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কমানো এবং ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালুর জন্য জনপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দৈনিক কর্মঘণ্টা দুই ঘণ্টা কমানোর সুপারিশও করা হবে।