এত কাছে, তবু এত দূরে! ব্লেয়ার টিকনারের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলটা যখন ব্যাটে-বলে হলো না গ্রাহাম হিউমের, তখন আইরিশ ড্রেসিং রুমের হতাশ অভিব্যক্তিটা যেন বলে দিচ্ছিল তা-ই। নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৬০ রানের চ্যালেঞ্জটা যে জেতা হয়নি ২ রানের জন্য, হারতে হয়েছে ১ রানে; আক্ষেপে না পোড়াটাই তো আয়ারল্যান্ডের জন্য অস্বাভাবিক!
আইরিশদের আক্ষেপটা আরও বাড়বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের স্কোরলাইনটা দেখলে। পরিসংখ্যান বলবে সিরিজটা আইরিশরা হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে, কিন্তু ফলাফল একটু এদিক ওদিক হলে হোয়াইটওয়াশ হওয়া দলটা হতে পারত নিউজিল্যান্ডও; সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই যে স্বাগতিকদের তরী ডুবেছে তীরে এসে!
তীরে এসে তরী ডোবার ঘটনা অবশ্য শেষ কিছুদিন ধরেই আইরিশ ক্রিকেটে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে ২২৫ রান তাড়া করে দলটি হেরেছিল ৪ রানে। এরপর সদ্য সমাপ্ত সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হারের ব্যবধানগুলো ছিল যথাক্রমে ১ আর ৩ উইকেটের।
সে নিয়তিটা আজ বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যেন নেমেছিল আয়ারল্যান্ড। ৩৬০ রানের লক্ষ্যে ভড়কে না গিয়ে শুরু থেকেই জবাব দিচ্ছিল বুক চিতিয়ে। শুরুর দশ ওভারে অ্যান্ড্রিউ বালবার্নি আর অ্যান্ড্রিউ ম্যাকব্রায়ানকে হারালেও রান তুলেছে ৬ এর ওপরে। তার পুরো কৃতিত্বটাই পল স্টার্লিংয়ের। প্রতি ওভারেই অন্তত একটা করে বের করছিলেন বাউন্ডারি, তাতে আস্কিং রেটটাও ছিল নাগালের মধ্যেই।
তৃতীয় উইকেটে হ্যারি টেক্টরের সঙ্গে গড়েন ১৭৯ রানের জুটি, নিজে পেয়ে যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা। তাতে আয়ারল্যান্ডের অসম্ভবকে সম্ভব করার ভিতটাও গড়া হয়ে যায় ভালোভাবেই। দলীয় ২৪১ রানে তিনি ফিরলেন বটে, কিন্তু সুতোয় ঢিল পড়তে দেননি টেক্টর। নিজে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে তিনি যখন ফিরছেন ১০৮ রান করে, জয় থেকে তখন মাত্র ৫০ রানের দূরত্বে আইরিশরা। ২৩ রানের ক্যামিও খেলে জর্জ ডকরেল এরপর লড়েছেন বটে, কিন্তু শেষটা করে আসতে পারেননি।
ডকরেলের ফেরার সময় আইরিশদের প্রয়োজন ছিল ৯ বলে ১৩ রান। কিন্তু সে সমীকরণ আর মেলাতে পারেননি জর্জ হিউম, ক্রেইগ ইয়াং আর জশ লিটলরা। তাতেই ১ রানের আক্ষেপ সঙ্গী হয় আয়ারল্যান্ডের।
এর আগে মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরি আর দেড়শ ছোঁয়া স্ট্রাইক রেটে হেনরি নিকলসের ৭৯ আর জশ ফিলিপসের ৪৭ রানের ইনিংসে ভর করে ৩৬০ রানের পাহাড় দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। বুক চিতিয়ে জবাব দিয়েও যা ১ রানের জন্য তাড়া করতে পারেনি আয়ারল্যান্ডের। তাতে তীরে এসে তরী ডোবার নিয়তিটাকেও আর বদলানো হয়নি তাদের, আরও একবার হতাশায় পুড়তে হয় স্টার্লিং-টেক্টরদের।