‘শ্রীলঙ্কার পরিণতি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের’

মত ও পথ রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)
ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশের অবস্থা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। যেসব দেশে আইএমএফ শ্রীলঙ্কার মতো ঝুঁকি দেখছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই তালিকায় আরও রয়েছে পাকিস্তান, লাওস এবং মালদ্বীপের নামও।

আইএমএফ প্রধানের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যাপকমাত্রায় অর্থপাচার ও অতি মুনাফার আশায় উন্নত দেশে মূলধন বিনিয়োগের মতো সংকটে জর্জরিত হতে পারে। এতে করে সংকট মোকাবিলায় এসব দেশের সরকারের নেয়া নীতিমালা বড় ধরনের হোঁচট খেতে পারে।

শনিবার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, উচ্চ ঋণের মাত্রা এবং সীমিত নীতির জায়গাসহ দেশগুলি অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হতে পারে। সতর্কতার জন্য শ্রীলঙ্ককার দিকে দেখতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোও পরপর চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানির জন্য অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শাতাংশ বেড়েছে। খাদ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। এই বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশটির সরকার আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ বেল আউট চেয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অচলাবস্থার কারণে তা আটকে গেছে।

সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে এমন অস্থিরতার মধ্যে লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি ও উর্ধ্বমুখী সুদের হার, মুদ্রার দরপতন, উচ্চ মাত্রায় ঋণের বোঝা ও রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে এশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে আইএমএফ। এ অবস্থায় পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও লাউসসহ আরও কয়েকটি দেশে শ্রীলঙ্কার পরিণতি আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইএমএফ।

বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত আট বছরের মধ্যে দেশের মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে, মে মাসে যার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় এরই মধ্যে সরকার অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ করার নীতি অনুমোদন দিয়েছে। প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠানোকে উৎসাহিত করতে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা আরও সহজ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কমিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক কিম ইং তানের মতে, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সরকার নিত্যপণ্য ও স্বাস্থ্যসেবায় ভর্তুকি চালিয়ে যেতে চরম হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে ব্যয়ের তালিকা গুরুত্বের ভিত্তিতে আবারও সাজাতে হবে। সেইসঙ্গে ভোক্তার আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে কঠোর নীতিমালাও আরোপ করেছে সরকার।

‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী মূল্য। বিশ্ব বাজার সামাল দিতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যাপকহারে বিশ্বসংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণের উচ্চহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধি দল। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সুশাসনের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফের পাঁচ সদস্যের স্টাফ মিশন গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন। এর আগে গত মার্চে তারা প্রথম এসেছিলেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও তা কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। এর কারণ জানতে চায় আইএমএফ। জবাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

এখানেও রয়েছে ভিন্নমত। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের ডেটা ব্যবহার করে বৈদেশিক ঋণখেলাপির ঝুঁকিতে থাকা ২৫ দেশের দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। এ তালিকায় নাম আসেনি বাংলাদেশের। সংস্থাটির মতে বাংলাদেশের ঋণখেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে তালিকায় নাম রয়েছে পাকিস্তানের।

শেয়ার করুন