ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকের চাপায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, স্বামী ও সন্তান নিহত ও আলৌকিকভাবে গর্ভের শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঘটনায় ঘাতক ট্রাকটির চালক রাজু আহমেদ শিপনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
ঢাকার সাভার এলাকা থেকে সোমবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান তিনি।
গত শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।
র্যাব জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসতেই সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দম্পতিসহ তাদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয় ট্রাকটি।
এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী নিহত হন। আর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে তার গর্ভে থাকা কন্যাশিশু।
এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও সদ্যোজাত কন্যাকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সানজিদারও মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেলেও সে বেঁচে আছে। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবীব নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটি চিকিৎসাধীন।
এ দুর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর অভিযানে সোমবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে দুর্ঘটনায় জড়িত ঘাতক ট্রাক চালক রাজু আহমেদ সিপনকে (৪২) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ট্রাকচালক নিহতদেরকে গাড়ি চাপা দেওয়ার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত রাজু গত ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহন করে আসছিল। এর মধ্যে সে একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মালামাল আনলোড করে পুনরায় রাজশাহী ফিরে আসে। পরবর্তীতে গত ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট হতে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরবর্তীতে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য রাত ১২টার সময় রওয়ানা করে।
পথিমধ্যে সে হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিল এবং কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা নিহত জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।
দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামায়। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। পরবর্তীতে বাস থেকে সে ময়মনসিংহ বাইপাসে নামে এবং সেখান থেকে একটি সিএনজি করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে সে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছায়। সেখান থেকে সে তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকে। গতকাল এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।